সীতাকুণ্ড শক্তিপীঠ, চট্টগ্রাম

সীতাকুণ্ড শক্তিপীঠ, চট্টগ্রাম

বাংলাদেশের সীতাকুন্ডের নিকটে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপরে অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির অন্যতম বিখ্যাত শক্তিপীঠ। এই স্থানে দেবীর ডান হাত পতিত হয়েছে। এই পীঠের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর নাম ভবানী এবং পীঠরক্ষক ভৈরবের নাম চন্দ্রশেখর।

শক্তিপীঠ

শক্তিপীঠ হিন্দুধর্মের পবিত্রতম তীর্থগুলির অন্যতম। লোকবিশ্বাস অনুসারে, শক্তিপীঠ নামাঙ্কিত তীর্থগুলিতে দেবী দাক্ষায়ণী সতীর দেহের নানান অঙ্গ প্রস্তরীভূত অবস্থায় রক্ষিত আছে। সাধারণত ৫১টি শক্তিপীঠের কথা বলা হয়ে থাকলেও, শাস্ত্রভেদে পীঠের সংখ্যা ও অবস্থান নিয়ে মতভেদ আছে। পীঠনির্ণয় তন্ত্র গ্রন্থে শক্তিপীঠের সংখ্যা ৫১। শিবচরিত গ্রন্থে ৫১টি শক্তিপীঠের পাশাপাশি ২৬টি উপপীঠের কথাও বলা হয়েছে। কুব্জিকাতন্ত্র গ্রন্থে এই সংখ্যা ৪২। আবার জ্ঞানার্ণবতন্ত্র গ্রন্থে পীঠের সংখ্যা ৫০। ভারতীয় উপমহাদেশের নানা স্থানে এই শক্তিপীঠগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সকল শক্তিপীঠসমূহে শক্তিদেবী ভৈরবের সাথে অবস্থান করেন।

পৌরাণিক কাহিনী

কিংবদন্তি অনুসারে, সত্য যুগের কোনও এক সময়ে মহাদেবের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তার শশুর দক্ষ রাজা বৃহস্পতি নামে এক যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। কন্যা সতী দেবী তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ‘যোগী’ মহাদেবকে বিবাহ করায় দক্ষ ক্ষুব্ধ ছিলেন। মহাদেব ও সতী দেবী ছাড়া প্রায় সকল দেব-দেবীকে দক্ষ নিমন্ত্রণ করেছিলেন। মহাদেবের অনিচ্ছা সত্ত্বেও সতী দেবী মহাদেবের অনুসারীদের সাথে নিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন।

কিন্তু সতী দেবী আমন্ত্রিত অতিথি না হওয়ায় তাকে যথাযোগ্য সম্মান দেওয়া হয়নি। অধিকন্তু দক্ষ মহাদেবকে অপমান করেন। সতী দেবী তার স্বামীর প্রতি পিতার এ অপমান সহ্য করতে না পেরে যোগবলে আত্মাহুতি দেন।

এ খবর শুনে শোকাহত মহাদেব রাগান্বিত হয়ে দক্ষর যজ্ঞ ভণ্ডুল করেন এবং সতী দেবীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রলয় নৃত্য শুরু করেন। জগৎ সংসার ধ্বংস হবার উপক্রম হয়। অন্যান্য দেবতা অনুরোধ করে এই নৃত্য থামান এবং বিষ্ণুদেব তার সুদর্শন চক্র দ্বারা সতী দেবীর মৃতদেহ ছেদন করেন। এতে সতী মাতার দেহখণ্ডসমূহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পড়ে এবং পবিত্র পীঠস্থান (শক্তিপীঠ) হিসেবে পরিচিতি পায়।

ইতিহাস

সংস্কৃত রাজমালা গ্রন্থানুসারে প্রায় ১২০৪ খৃস্টাব্দে গৌড়ের বিখ্যাত আদিশূর বংশের রাজা বিশ্বম্ভর শূর জলপথে চন্দ্রনাথ মন্দির দর্শনের চেষ্টা করেন। নিগমকল্পতরুর কবি জয়দেব গোস্বামী সুদীর্ঘকাল চন্দ্রনাথ ধামে বসবাস করেন। ত্রিপুরা রাজ্যের শিবভক্ত রাজা ধন্যমানিক্য চন্দ্রনাথ মন্দিরে প্রসাদ প্রেরণ করতেন। এমন কি তিনি এখান থেকে শিবমূর্তি নিজ রাজ্যে স্থানান্তরের চেষ্টা করেন।

মূর্তি

সীতাকুণ্ড অপরূপ প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্যের লীলাভূমি । এ এলাকাকে হিন্দুদের বড় তীর্থস্থান বলাই ভালো । এখানের সর্বোচ্চ পাহাড় চুড়ায় অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির । আর অন্যান্য আরো রয়েছে বড়বাজার পূজা মন্ডপ, ক্রমধেশ্বরী কালী মন্দির, ভোলানন্দ গিরি সেবাশ্রম, কাছারী বাড়ী, শনি ঠাকুর বাড়ী, প্রেমতলা, শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী সেবাশ্রম, শ্রী রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম, গিরিশ ধর্মশালা, দোল চত্বর, ননী গোপাল সাহা তীর্থযাত্রী নিবাস, তীর্থ গুরু মোহন্ত আস্তানা, বিবেকানন্দ স্মৃতি পঞ্চবটি, জগন্নাথ আশ্রম, শ্রীকৃষ্ণ মন্দির,শংকরমঠ ও আশ্রম, বিশ্বনাথ মন্দির, মহাশ্মশানভবানী মন্দির, স্বয়ম্ভুনাথ মন্দির,গয়াক্ষেত্র, জগন্নাথ মন্দির, বিরুপাক্ষ মন্দির, পাতালপুরী, অন্নপূর্ণা মন্দির ইত্যাদি। সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ মন্দির তীর্থযাত্রীদের জন্য এক পবিত্র স্থান। এর পুরনো নাম ছিলো “সীতার কুন্ড মন্দির”।

এই মন্দিরে প্রতিবছর শিবরাত্রি তথা শিবর্তুদশী তিথিতে বিশেষ পূজা হয়; এই পূজাকে কেন্দ্র করে সীতাকুণ্ডে বিশাল মেলা হয়। সীতাকুন্ড চন্দ্রনাথ পাহাড় এলাকা বসবাসকারী হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বছর বাংলা ফাল্গুন মাসে (ইংরেজি ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস) বড় ধরনের একটি মেলার আয়োজন করে থাকে। যেটি শিবর্তুদশী মেলা নামে পরিচিত। এই মেলায় বাংলাদেশহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য সাধু এবং নারী-পুরুষ যোগদান করেন।এই মেলা দোলপূর্ণিমা পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। প্রতি বছর পবিত্র এই তীর্থস্থানে ১০-২০ লক্ষাদিক তীর্থযাত্রীর আগমণ ঘটে ।

গুগল ম্যাপে লোকেশান

সূত্র: উইকিপিডিয়া

তারিখ ২৭.০১.২০২২