বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর ক্রমবর্ধমান অত্যাচারের অভিযোগ তুলে আমেরিকায় বসবাসকারী বাংলাদেশি হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে আর্জি জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, বাংলাদেশে ইসলামি শক্তির উত্থানে তাঁদের অস্তিত্ব সংকট তৈরি হয়েছে। তাঁরা চাইছেন চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের মুক্তি এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ‘কম্প্রিহেনসিভ মাইনরিটি প্রোটেকশন অ্যাক্ট’ চালু হোক। একইসঙ্গে তাঁরা বাংলাদেশকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান, যাতে দেশে ধর্মীয় ও জাতিগত হিংসা বন্ধ করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্র, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪: আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই নতুন বছরে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে চলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের আগে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আমেরিকায় বসবাসকারী বাংলাদেশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাঁর কাছে সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন। বাংলাদেশি হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের সংগঠন এই উদ্যোগ নিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, বাংলাদেশে ইসলামি শক্তির উত্থান তাঁদের অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ ও নিপীড়নের ঘটনা বেড়েছে।
২০২৪ সালের ৫ অগস্ট বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা আন্দোলনের ফলে সেদিনই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং ভারতে আশ্রয় নেন। এর পর বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়, যার নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেল বিজয়ী মহম্মদ ইউনুস। নতুন সরকারের শপথ নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় পরিস্থিতি অনেকটাই অস্থির হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন জেলায় সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ ও মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা সামনে এসেছে। একইসঙ্গে চট্টগ্রামের হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করার পর উত্তেজনা চরমে ওঠে।
চট্টগ্রাম আদালতে চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের বিচার চলাকালীন ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং এক আইনজীবী নিহত হন। চিন্ময়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয়। আমেরিকায় বসবাসকারী বাংলাদেশি হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা এই ঘটনার বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে মেমোরেন্ডাম জমা দেন। তাঁদের দাবি, চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।
উক্ত মেমোরেন্ডামে তাঁরা ‘কম্প্রিহেনসিভ মাইনরিটি প্রোটেকশন অ্যাক্ট’ চালু করার দাবি করেছেন। তাঁদের মতে, এই আইনের মাধ্যমে সংখ্যালঘু সংগঠন এবং ব্যক্তিদের সাংবিধানিক সুরক্ষা প্রদান করা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে তাঁরা বাংলাদেশে ঘৃণ্য অপরাধ ও ঘৃণা ভাষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন। সংখ্যালঘুদের জন্য পৃথক নির্বাচকমণ্ডলী গঠনের প্রস্তাবও তাঁরা উত্থাপন করেছেন, যা তাঁদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় চর্চার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
এদিকে, শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে তাঁর প্রত্যর্পণ চেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বেড়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন মসজিদে আওয়ামি লিগের ফিরে আসার বার্তা প্রদর্শিত হচ্ছে, যা দেশে রাজনৈতিক বিভাজনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সংখ্যালঘুদের এই আবেদন বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপর চাপ তৈরি করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকার নতুন প্রশাসন যদি এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমীকরণে পরিবর্তন আসতে পারে। আমেরিকায় বসবাসকারী বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতির উপর নতুন আলোকপাত করবে। তাঁদের আশা, ট্রাম্প প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার বন্ধ হবে এবং একটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হবে।