চট্টগ্রামের হাজারি গলিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বলল ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, হিংসা ছড়িয়ে সংখ্যালঘুদের ব্যবসা ও সম্পত্তির ক্ষতি করা হচ্ছে। পুলিশ ও সেনা অভিযানে প্রায় ৫৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যারা আদালতে হাজির হওয়ার সময় শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছে। (সূত্রঃ আনন্দবাজার)
চট্টগ্রাম, ৮ নভেম্বর ২০২৪: চট্টগ্রামের হাজারি গলিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা বন্ধে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানান, সম্প্রতি চট্টগ্রামের হাজারি গলিতে একটি সামাজিক মাধ্যম পোস্টকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘুদের দোকানপাট লুটসহ বিভিন্ন হিংসাত্মক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মন্ত্রকের তরফ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়।
মঙ্গলবার একটি ফেসবুক পোস্টে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন)-এর বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগে স্থানীয় সংখ্যালঘুদের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ঘটনার সূত্রপাত ওসমান আলি নামে এক ব্যবসায়ীর ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে, যা সংখ্যালঘুদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিবাদ সৃষ্টি করে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে জনতার সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ জানায়, সংঘর্ষের সময় কিছু উগ্র ব্যক্তি অলঙ্কারের কাজে ব্যবহৃত অ্যাসিড যৌথ বাহিনীর সদস্যদের দিকে নিক্ষেপ করে, যার ফলে কিছু পুলিশ ও সেনা সদস্য আহত হন।
সহিংসতার জবাবে যৌথ বাহিনী বড় আকারে অভিযান চালিয়ে ৮০ জনকে আটক করে, যাদের মধ্যে ৫৩ জনকে গ্রেফতার করা হয় এবং বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা ৫৩ জন যুবকের মধ্যে অনেকেই মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় আইনজীবীদের দাবি, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অনেক নাবালকও রয়েছে, যাদের বয়স বড় দেখিয়ে মামলা করা হয়েছে। আদালতে হাজির হওয়া ৫৩ জনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। আইনজীবীরা আরও অভিযোগ করেন, আটককৃতদের চোখ-মুখ বেঁধে নির্যাতন চালানো হয়েছে এবং এসময় তাদের সাম্প্রদায়িক গালাগালিও দেওয়া হয়েছে।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যবসা ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র জয়সওয়াল বলেন, “আমরা আশা করি বাংলাদেশ সরকার সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে এবং চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
চট্টগ্রামের এই ঘটনা ছাড়াও ঢাকার আদালতে বৃহস্পতিবার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। প্রাক্তন মন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন আমুকে একটি খুনের মামলায় আদালতে তোলা হয়। আদালতে সরকারি কৌঁসুলি আমুর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাঠ করেন এবং ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানান। আমুর আইনজীবী স্বপন রায়চৌধুরী সওয়াল শুরু করলে আদালতে উপস্থিত বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা তাঁর ওপর হামলা চালায়। স্বপন রায়কে আদালত কক্ষের বাইরে টেনে নিয়ে মারধর করা হয়। বিচারক আমুকে নিজেই সওয়াল করতে বলেন। এ সময় আমু বলেন, “বাংলাদেশে এখন এমন এক ভীতিকর পরিস্থিতি চলছে যে কথা বলারও উপায় নেই।” এরপর বিচারক তাঁকে ৬ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠান।
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতায় বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
তারিখ ০৯.১১.২০২৪