বরগুনায় লুটপাটের শিকার ১০টি সংখ্যালঘু পরিবার এখনও নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারেননি

বরগুনায় লুটপাটের শিকার ১০টি সংখ্যালঘু পরিবার এখনও নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারেননি

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় ৫ আগস্টের পর হামলা ও লুটপাটের শিকার ১০টি সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা এখনও বাড়ি ফিরতে পারেননি। অভিযোগ রয়েছে, বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির, যদিও তারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন ঘটনার তদন্তে নেমেছে, তবে অনেক পরিবার এখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এ ঘটনায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ বেড়ে গেছে।

বরগুনা, ৩১ অক্টোবর: বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় গত ৫ আগস্টের পরে হামলা ও লুটপাটের শিকার ১০টি সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা এখনও নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারেননি। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, হামলাকারীরা বিএনপির নেতা হিসেবে পরিচিত এবং তাদের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি করার কথা জানানো হয়েছে। তবে বিএনপির নেতারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, কাঁঠালতলী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য অঞ্জন ভট্টাচার্য এবং একই ইউনিয়নের বাসিন্দা সুজন রায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখনও বাড়ি ফিরতে পারেননি। তালুকের চরদুয়ানি গ্রামের অর্জুন হাওলাদার, শৈলেন হাওলাদার ও দেবাশীষ সেনগুপ্তের পরিবার এলাকাতেই থাকলেও তারা নিরাপত্তাহীনতায় পালিয়ে রয়েছেন।

পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ ফারুক বলেন, “আমি শুনেছি, এমাদুল খান নামের এক ব্যক্তি সংখ্যালঘুদের কাছে টাকা চাচ্ছেন। কিন্তু তিনি বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। বিএনপি কখনোই সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করে না। যদি কেউ বিএনপিকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আল মামুন জানান, উপজেলায় বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবারে হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে। বরগুনার পুলিশ সুপার মো. ইব্রাহিম খলিল বলেন, “টাকা চাওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন কমিটির বরগুনা জেলা শাখার সদস্যসচিব জয়দেব রায় বলেন, “৫ আগস্টের পর বরগুনায় ৩০টি ধর্মীয় সংখ্যালঘুর বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে পাথরঘাটায় ১০টি পরিবারের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।”

অঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, তার বাড়িতে ৬ আগস্ট হামলা চালানো হয় এবং তিনি পরিবারসহ বাড়ি ছেড়ে চলে যান। তিনি বলেন, “সরকার পতনের পর বিএনপির লোকজন হামলা চালিয়ে আমার দোকান ভাঙচুর করে। তারা আমার মোটরসাইকেলটি নিয়ে গেছে। তাদের ভয়ে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে গেছি।”

একই ইউনিয়নের সুজন রায় জানান, “আমার বাড়িতে কিছুই নেই, সব নিয়ে গেছে। এখনও হুমকি দেয়, টাকা দাবি করে। আমি এখন হাঁটতে পারি না। আমার পায়ের গিঁটে আঘাত লেগেছে।”

অর্জুন হাওলাদারের স্ত্রী মনি রানী জানান, “সরকার পতনের দিন আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করে মালামাল লুটপাট করা হয়। সেই থেকে আমার স্বামী বাড়িছাড়া।” অর্জুন বলেন, “টাকা দাবি করেছেন বিএনপির নেতা এমাদুল খান।”

এমাদুল খান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি কোনো টাকা চাইনি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আমি সেখানে পান খেতে গিয়েছিলাম।”

হাবিবুর রহমান, পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির সাবেক চেয়ারম্যান, বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমরা এ ঘটনাগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।”

জেলা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক হাসানুর রহমান বলেন, “একটি স্বাধীন দেশের নাগরিকদের ওপর এ ধরনের হামলার ঘটনা দুঃখজনক।” তিনি ২০০১ সালে পাথরঘাটায় একই ধরনের ঘটনার কথা উল্লেখ করেন।

এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ বাড়ছে এবং দ্রুত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠছে।

তারিখ ০৫.১১.২০২৪