কিশোরগঞ্জ জেলার ব্রাহ্মণকচুরী গ্রামে হিন্দু পরিবারে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ একটি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, ঘটনার পর মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা প্রশাসনের কাছে বিচার এবং নিজেদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চেয়েছেন। তাঁরা জানান, গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
কিশোরগঞ্জ, ৬ নভেম্বর ২০২৪: কিশোরগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার ব্রাহ্মণকচুরী গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে শহরের কালীবাড়ী মোড়ে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় দুই শতাধিক নারী-পুরুষ এই মানববন্ধনে অংশ নেন। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভকারীরা একটি মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেন।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ব্রাহ্মণকচুরী গ্রামে গীতা রানী বর্মনের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। অভিযুক্তরা এই হামলায় বাড়ির দরজা, জানালা ভেঙে লুটপাট করে এবং বসতভিটা থেকে পরিবারটিকে বিতাড়িত করে। ভুক্তভোগী গীতা রানী বর্মনের পরিবার জানান, ঘটনার পর প্রাণভয়ে তাঁরা বাড়ি ছেড়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন এবং এখনও তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারেননি।
গীতা রানী বর্মন এ ঘটনায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা ইদ্রিস মিয়াসহ মোট ১০ জনকে আসামি করা হয় এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৫০ জনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে। গীতা রানী বর্মন জানান, মামলা দায়েরের পরও আসামিদের গ্রেপ্তারে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। অভিযুক্তরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের জন্য ফোনে হুমকি দিচ্ছে এবং ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতারাও তাঁদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, সংখ্যালঘু পরিবারের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং দুঃখজনক। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইদ্রিস মিয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং দলীয়ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তবে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, আসামিরা পলাতক থাকায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি আশ্বাস দেন, আসামিদের গ্রেপ্তার করে দ্রুতই বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হবে।
ভুক্তভোগী গীতা রানী বর্মনের অভিযোগ, মামলা দায়ের করার পর ক্ষুব্ধ হয়ে আসামিরা তাদের বসতবাড়ির দরজা-জানালা পর্যন্ত খুলে নিয়ে গেছে। এমনকি, তাঁরা ফোনে হুমকি দিচ্ছে এবং বিদেশে থাকা তাঁর ছেলেকে মামলার আসামি হিসেবে জড়ানোর চেষ্টা করছে। হিন্দু ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা ও কালীপূজায় তাঁরা নিরাপত্তার অভাবে নিজের বাড়িতে থাকতে পারেননি বলে কষ্টের কথা জানান গীতা রানী। তিনি সরকারের কাছে তাঁদের নিরাপত্তা এবং নিজ ভিটায় ফিরে যাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বক্তারা সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সংঘটিত সব হামলার সুষ্ঠু বিচার এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা হুঁশিয়ারি দেন, প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে তাঁরা আরও কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করবেন।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নির্যাতন ও নিপীড়ন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভুক্তভোগী পরিবারটির সদস্যরা জানান, তাঁরা নিজ ভিটায় শান্তিপূর্ণভাবে ফিরে গিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে চান।
তারিখ ০৯.১১.২০২৪