বাংলাদেশের ঘটনায় ভারতে ‘হিন্দুত্ববাদীদের বর্বর প্রচার’, CPIM-র কথায় চটল নেটপাড়া

বাংলাদেশের ঘটনায় ভারতে ‘হিন্দুত্ববাদীদের বর্বর প্রচার’, CPIM-র কথায় চটল নেটপাড়া

বাংলাদেশে হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণদাসের গ্রেফতার ও জামিন খারিজের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সিপিআইএম। বামপন্থী দলটি দাবি করেছে যে, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাকে সংকটে ফেলছে। তারা তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারকে মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে এবং সাম্প্রদায়িক হামলা রোধ করতে আহ্বান জানিয়েছে

ঢাকা, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪: বাংলাদেশে সম্প্রতি সংঘটিত একাধিক ঘটনার মধ্যে চিন্ময় কৃষ্ণদাসের গ্রেফতারি একটি বিশাল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তিনি বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র এবং তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে, বিশেষ করে ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে আয়োজিত এক সমাবেশে জাতীয় পতাকার অবমাননা করার অভিযোগে। বিএনপি নেতা ফিরোজ খান এর পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের করেন। ৩১ অক্টোবর এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে চিন্ময় দাস ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয় এবং তাকে ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এদিকে, চিন্ময় কৃষ্ণদাসের গ্রেফতারির পর বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এই গ্রেফতারির তীব্র নিন্দা জানায় এবং তার মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায় কয়েক হাজার হিন্দু। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদকারীদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে, যার ফলে এক আইনজীবী নিহত হন। এ ঘটনায় ৮ জন হিন্দুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সিপিআইএম এই ঘটনার পর বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, মৌলবাদী শক্তি বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে, এবং এসব হামলা প্রতিরোধে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের অভাব রয়েছে। তারা বলেছে, “বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের যে অবস্থা, তা উদ্বেগজনক।” সিপিআইএম আরও দাবি করেছে যে, বাংলাদেশ সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে শান্তি ও ঐক্য বজায় রাখতে হবে।

সিপিআইএম তার বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলেছে, ভারতে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি বাংলাদেশে ঘটে চলা পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে উস্কানিমূলক প্রচার চালাচ্ছে। সিপিআইএমের দাবি, এই ধরনের বিভেদমূলক রাজনীতি বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় দেশেই বিপজ্জনক। তারা জানায়, “ধর্মের ভিত্তিতে বিভেদ সৃষ্টি করা, এই ধরনের রাজনীতি বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য ক্ষতিকর।”

ভারতে সিপিআইএমের এই মন্তব্যের পর, বিজেপির পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। বঙ্গ বিজেপির যুব মোর্চার সহ-সভাপতি তরুণজ্যোতি তিওয়ারি সিপিআইএমের বক্তব্যে দ্বিচারিতা উল্লেখ করে বলেন, “বাংলাদেশে মৌলবাদী সংগঠন এবং ভারতে হিন্দুত্ববাদী শক্তি, তাদেরকে একসাথে তোলা এক ধরনের রাজনৈতিক ছলনা।” তিনি সিপিআইএমের বিরুদ্ধে এও অভিযোগ করেন যে, তারা বাংলাদেশে মৌলবাদীদের নাম নিতে সাহস পাচ্ছে না।

এদিকে, সিপিআইএমের বিবৃতি সামনে আসার পর নেটপাড়ায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। বিজেপি, সিপিআইএমের বক্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাদের মতে, সিপিআইএমের এই ধরনের দ্বিচারিতার প্রমাণ তাদের আসল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পরিষ্কার করে দেয়।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সিপিআইএম সরকারের প্রতি কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে, তবে এই ঘটনার মাধ্যমে দুটি দেশের মধ্যে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

তারিখ: ২৯.১১.২০২৪