সরকার পরিবর্তনের পর সনাতনী সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে একীভূত হলো ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’। আট দফা দাবির সঙ্গে পাঁচটি নতুন দাবি উত্থাপন করে এই সংগঠনটি তাদের ঐক্যের বার্তা দিয়েছে। চট্টগ্রামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা তাদের লক্ষ্য ও দাবি তুলে ধরেন।
ঢাকা, ১৮ নভেম্বর, ২০২৪: আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, ভাঙচুর, নির্যাতন এবং অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। ‘সনাতন জাগরণ মঞ্চ’ এবং ‘সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট’ নামে দুটি প্ল্যাটফর্ম এতদিন আলাদাভাবে তাদের দাবি আদায়ের জন্য কাজ করছিল। এবার তারা একীভূত হয়ে নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করেছে। নতুন প্ল্যাটফর্মটির নাম ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’।
গতকাল রোববার চট্টগ্রাম নগরের প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই সংগঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী বলেন, “সনাতনীদের নিয়ে যেন আর কোনো রাজনৈতিক দল খেলতে না পারে; তাই আমরা এই নতুন প্ল্যাটফর্ম গঠন করেছি। বিভিন্ন মতাদর্শের সাধু-সন্তরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই উদ্যোগ নিয়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করব না। যারা আমাদের দাবি, প্রত্যাশা এবং সমঅধিকারের নীতিতে বিশ্বাসী, নাগরিক মর্যাদা দিয়ে আমাদের সঙ্গে চলবে, তাদের সঙ্গে আমরা থাকব। এই কারণেই সব সনাতনী জনগোষ্ঠী একীভূত হয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে সনাতনী সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রমূলক রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার প্রসঙ্গও তোলা হয়। মুখপাত্র জানান, “দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কারও বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা যায় না। কিন্তু ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ ধরনের মামলা দায়ের করে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। এটি বিশেষ মহলের অসৎ উদ্দেশ্যকে নির্দেশ করে, যারা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায়।”
সংবাদ সম্মেলনে আগের আট দফা দাবির সঙ্গে আরও পাঁচটি নতুন দাবি উত্থাপন করা হয়। সেগুলো হলো:
১. গত ৫ নভেম্বর চট্টগ্রামের হাজারী গলির ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন।
২. আটক ও নির্যাতনের শিকার সনাতনীদের মুক্তি এবং যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা।
৩. আটককৃতদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিভিন্ন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর প্রক্রিয়া বন্ধ।
৪. সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে সনাতনীদের নির্যাতনকারীদের বিচার।
৫. সাধু-সন্ত ও সংগঠকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ষড়যন্ত্রমূলক রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা প্রত্যাহার।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখযোগ্য সনাতনী ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে শ্রীমৎ গোবিন্দ ব্রহ্মচারী, প্রেমময়ীনন্দ ব্রহ্মচারী, রননাথ ব্রহ্মচারী, স্বামী উমেশানন্দ ব্রহ্মচারী, পরিতোষানন্দ গিরি মহারাজ, লীলারাজ গৌরাঙ্গ, অজপানন্দ ব্রহ্মচারী মহারাজ, সোমনাথ চৈতন্য রুদ্রাক্ষ, কুশল বরণ চক্রবর্তী, অক্ষরানন্দপুরী মহারাজ, অবিশ্বম গৌর দাশ ব্রহ্মচারী, এবং স্বামী ধীরেশ্বানন্দ গিরি মহারাজ প্রমুখ ছিলেন।
নতুন এই প্ল্যাটফর্মটি সনাতনী সম্প্রদায়ের অধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংগঠনটি রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রেখে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
তারিখ: ১৮.১১.২০২৪