প্রাক্তন মার্কিন কংগ্রেসওমেন এবং বৈষ্ণব হিন্দু তুলসী গ্যাবার্ড ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক (DNI) হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। হিন্দু ধর্মে তার গভীর বিশ্বাস এবং ভক্তি যোগ, কর্ম যোগের মাধ্যমে আত্মত্যাগের আদর্শ তাকে মার্কিন রাজনীতিতে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সাহায্য করেছে। কংগ্রেস সদস্য থেকে শুরু করে বিদেশ নীতিতে সাহসী অবস্থান এবং এখন গোয়েন্দা বিভাগের নেতৃত্ব—গ্যাবার্ডের রাজনৈতিক যাত্রা এক উজ্জ্বল অধ্যায়। তার ধর্মবিশ্বাস এবং যোগাভ্যাসের মাধ্যমে মার্কিন রাজনীতিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বের একটি নতুন অধ্যায় রচনা করেছেন। গীতার প্রতি তার গভীর আস্থা তাকে কঠিন পরিস্থিতিতেও মানসিক শান্তি দিয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র, ১৭ নভেম্বর, ২০২৪: ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক (DNI) হিসেবে তুলসী গ্যাবার্ডের নিয়োগ মার্কিন রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বৈষ্ণব হিন্দু এবং ভক্তি যোগের অনুসারী গ্যাবার্ড তার আধ্যাত্মিক বিশ্বাস এবং রাজনৈতিক আদর্শের সংমিশ্রণে মার্কিন রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছেন।
২০১২ সালে হাওয়াই থেকে কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত হয়ে তুলসী গ্যাবার্ড মার্কিন রাজনীতিতে প্রথম হিন্দু সদস্য হিসেবে ইতিহাস তৈরি করেন। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি নিজের ব্যক্তিগত গীতার ওপর হাত রেখে শপথ নেন। তিনি বলেন, “গীতা আমার জীবনে অভ্যন্তরীণ শান্তি এবং শক্তির প্রধান উৎস। যুদ্ধক্ষেত্রের চরম কঠিন পরিস্থিতিতেও এটি আমাকে মানসিক আশ্রয় দিয়েছে।” ২০১৭ সালেও তিনি একইভাবে গীতার ওপর শপথ নিয়ে তার আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের প্রতি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
গ্যাবার্ড ১৯৮১ সালে হাওয়াইতে এক বহুসাংস্কৃতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা ক্যারল হিন্দু ধর্ম দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তার সন্তানদের হিন্দু নাম দেন, যার মধ্যে “তুলসী” নামটি একটি পবিত্র উদ্ভিদের প্রতি ইঙ্গিত করে। ছোটবেলা থেকেই গ্যাবার্ড ভক্তি যোগ এবং কর্ম যোগের অনুশীলনে আত্মনিয়োগ করেন। ভক্তি যোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, “এটি ঈশ্বরের সঙ্গে গভীর, ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করে।” কর্ম যোগের বিষয়ে তিনি ব্যাখ্যা করেন, “আমাদের জীবনের প্রতিটি কাজ অন্যের সেবায় উৎসর্গ করার শিক্ষা দেয়।”
গ্যাবার্ড তার রাজনৈতিক জীবনে বরাবরই স্বাধীন মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিতে তার সাহসী অবস্থান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি সিরিয়া নিয়ে ওবামা প্রশাসনের অবস্থানের সমালোচনা করেছিলেন এবং ২০২০ সালে ইরানের জেনারেল কাসেম সোলাইমানির উপর ড্রোন হামলার বিরোধিতা করেছিলেন। ২০২২ সালে তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ত্যাগ করেন এবং এর কারণ হিসেবে “এলিটদের স্বার্থ” এবং “বিভেদমূলক মতাদর্শের” দিকে ইঙ্গিত করেন।
গ্যাবার্ডের আধ্যাত্মিক বিশ্বাস তার রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি স্তরে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে। তিনি নিয়মিতভাবে জনমাষ্টমী এবং দীপাবলির মতো উৎসবে বক্তব্য রাখেন এবং আত্মত্যাগ, আলো এবং আধ্যাত্মিক পুনর্জাগরণের মূল্যবোধ তুলে ধরেন। তিনি একবার বলেছিলেন, “প্রভু শ্রীকৃষ্ণ সমস্ত সুখের আধার। সত্যিকারের সুখ পেতে হলে আমাদের জীবন ঈশ্বর এবং অন্যদের সেবায় উৎসর্গ করতে হবে।”
ইস্কনের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের সময়ও গ্যাবার্ড আধ্যাত্মিকতার গুরুত্ব সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন। তার মতে, আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ আধুনিক জীবনে শান্তি এবং সামঞ্জস্য বজায় রাখতে অপরিহার্য। তিনি ইস্কনের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীল প্রভুপাদ এবং বৈষ্ণব আচার্যদের অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তার মতে, বৈষ্ণব ধর্ম সার্বজনীন, যা সকল ধর্মীয় অনুভূতিকে মূল্য দেয়।
তিনি আরও বলেন, “ঈশ্বরের নাম গাওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের হৃদয়ে লুকিয়ে থাকা প্রেমকে পুনর্জাগ্রত করতে পারি। এই প্রেম এবং সহানুভূতির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা অন্যদের কল্যাণে কাজ করতে পারি।”
ডোনাল্ড ট্রাম্প তুলসী গ্যাবার্ডকে DNI হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তার প্রশাসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অর্পণ করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, “তুলসী তার কর্মজীবনের সাহসী আত্মা নিয়ে আমাদের গোয়েন্দা বিভাগকে নেতৃত্ব দেবেন।”
মাত্র ৪৩ বছর বয়সে তুলসী গ্যাবার্ড মার্কিন রাজনীতিতে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার আধ্যাত্মিকতা এবং সেবামূলক মানসিকতা তাকে একজন অনন্য নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
তুলসী গ্যাবার্ড তার রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি তার ধর্মীয় বিশ্বাস এবং আধ্যাত্মিক পথকে মার্কিন মুলুকে হিন্দু ধর্মের পরিচিতি এবং স্বীকৃতি বাড়ানোর জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করেছেন। একজন বৈষ্ণব নেতা হিসেবে গ্যাবার্ড তার আধ্যাত্মিক মূল্যবোধকে রাজনীতির সঙ্গে মিলিত করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সুখ আসে তখন, যখন আমরা অন্যদের সেবায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করি।”
তারিখ: ১৭.১১.২০২৪