হাজারী লেনের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি

হাজারী লেনের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি

বাংলাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অধিকার রক্ষায় নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’। দুটি সংগঠন একত্রিত হয়ে আট দফা দাবির ভিত্তিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। চট্টগ্রামের হাজারী লেনের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত, নির্যাতিতদের মুক্তি, এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে রোববার ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরে সংবাদ সম্মেলন করে তারা।

ঢাকা, ১৭ নভেম্বর, ২০২৪: বাংলাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অধিকার রক্ষায় দুটি সংগঠন একত্রিত হয়ে ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’ নামে নতুন একটি ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ গঠন করেছে। এই নতুন জোট আট দফা দাবি সামনে রেখে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। রোববার ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এ সময় বিভিন্ন মঠ ও মন্দিরের সাধু-সন্তরাও উপস্থিত ছিলেন।

চিন্ময় কৃষ্ণ জানান, ৫ নভেম্বর চট্টগ্রামের হাজারী লেনের ঘটনায় নিরপরাধ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের গ্রেপ্তার এবং নির্যাতনের বিষয়টি তদন্তের দাবি জানানো হচ্ছে। আটক ব্যক্তিদের মুক্তি ও যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে ষড়যন্ত্রমূলক হত্যা মামলায় আটক দেখানোর প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘‘আমরা কোনো অপরাধীর পক্ষে নই। যদি কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা করে থাকে, তাহলে তার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত এবং প্রচলিত আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত।’’

চিন্ময় কৃষ্ণ আরও দাবি করেন, সম্প্রতি সনাতন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠকের বিরুদ্ধে মিথ্যা রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পেছনে উদ্দেশ্য হিসেবে মুখপাত্র বলেন, ‘‘সনাতন সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ এবং বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট দীর্ঘদিন ধরে আলাদাভাবে কাজ করে আসছে। কিন্তু বর্তমানে যৌথভাবে ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’ নামে একত্রিত হয়েছে।’’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর বাড়িঘর, উপাসনালয়, এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়েছে। এসব ঘটনায় এখনও দায়ীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, ‘‘সারা দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষকরা অযৌক্তিকভাবে ভীতি প্রদর্শন ও জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন। সংখ্যালঘুদের ওপর এই নির্যাতনের অবসান হওয়া দরকার।’’

চিন্ময় কৃষ্ণ জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আট দফা যৌক্তিক দাবি নিয়ে ধারাবাহিক সভা-সমাবেশ করা হচ্ছে। গত ২৫ অক্টোবর লালদীঘি ময়দানে একটি শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তবে সেখানে ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়, যা প্রকৃতপক্ষে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা।

তিনি আরও বলেন, ‘‘সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের মাতৃভূমিকে মাতৃতুল্য মনে করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে সনাতনী সম্প্রদায়ের ত্যাগের ইতিহাস রয়েছে।’’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হাজারী লেনের ঘটনার পর ১৫ দিন কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়েছিল। তবে পূর্বঘোষিত বিভাগীয় সমাবেশগুলো পুনরায় আয়োজনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। রংপুরের সমাবেশ হবে ২২ নভেম্বর, বরিশালে ২০ ডিসেম্বর, এবং খুলনায় ১৩ ডিসেম্বর।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন লীলারাজ গৌরদাস ব্রহ্মচারী, অজপানন্দ ব্রহ্মচারী, অক্ষরানন্দ পুরি মহারাজ, বীরেশ্বরানন্দ পুরি মহারাজসহ আরও অনেকে।

তারিখ: ১৮.১১.২০২৪