বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা বেড়েছে বলে দাবি করেছে সম্মিলিত সনাতন পরিষদ। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি জানায়, আগস্টের পর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরবাড়ি, মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট, এবং ইসকন সম্পর্কে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায় বলছে, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হত্যাকাণ্ড এবং সম্পত্তি দখল চালানো হয়েছে, যা নাগরিক জীবনকে অশান্ত করছে। এ বিষয়ে কোনো সুষ্ঠু বিচার হয়নি বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনটি। সম্প্রতি চট্টগ্রামে হাজার হাজার হিন্দু তাদের অধিকারের দাবিতে সমাবেশও করেছে। (সূত্রঃ ভয়েস-অফ-আমেরিকা)
ঢাকা, ১৬ নভেম্বর, ২০২৪: বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর নির্যাতন ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১৬ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন পরিষদ এ অভিযোগ তোলে।
সম্মিলিত সনাতন পরিষদের নেতারা বলেন, “১৯৪৭ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সনাতন সম্প্রদায়ের ওপর বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা, সম্পদ লুট, হত্যাকাণ্ড, ধর্মান্তর, ধর্ষণ এবং ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে মিথ্যা মামলা দায়েরের ইতিহাস রয়েছে। এসব ঘটনার একটিও সঠিক বিচারের আওতায় আসেনি।”
সংগঠনটি আরও জানায়, “এ ধরনের অপরাধের সঠিক বিচার না হওয়ায় অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নির্যাতিত ব্যক্তিরা ভীত ও হতাশ হয়ে পড়েছে, যা সমাজে বিভেদ তৈরি করছে এবং নাগরিক জীবনকে বিপর্যস্ত করছে।”
সম্মিলিত সনাতন পরিষদ ৪১টি সংখ্যালঘু সংগঠনের একটি প্ল্যাটফর্ম, যারা হিন্দু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা ও ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করছে।
এর আগে, নভেম্বরের শুরুর দিকে, চট্টগ্রামের একটি সমাবেশে প্রায় ৩০,০০০ হিন্দু তাদের অধিকার রক্ষার দাবিতে প্রতিবাদে অংশ নেয়। তারা দাবি তোলে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা বেড়েছে।
হিন্দু গোষ্ঠীর অভিযোগ অনুযায়ী, গত ৫ আগস্ট থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর হাজার হাজার হামলা হয়েছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার এই পরিসংখ্যানকে অতিরঞ্জিত বলে অভিহিত করেছে।
চট্টগ্রামের প্রধান মোড়ে আয়োজিত ওই সমাবেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান এবং হামলা ও হয়রানি থেকে সুরক্ষার আবেদন করেন। সমাবেশে উপস্থিত পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ছিল।
ইসকন সম্পর্কে অপপ্রচার এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি লুটের অভিযোগে সম্মিলিত সনাতন পরিষদ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের বক্তব্য, “দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখতে এসব নির্যাতনের সঠিক বিচার হওয়া প্রয়োজন।”
সংগঠনটি বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছে, “ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে সনাতন সম্প্রদায় শান্তিতে বসবাস করতে পারে।”
সম্মিলিত সনাতন পরিষদের দাবি অনুযায়ী, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর এই সহিংসতার ফলে তাদের মধ্যে চরম ভীতি ও হতাশা দেখা দিয়েছে। এতে তারা ক্রমাগত সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এ ধরনের সহিংসতা ও বৈষম্যের অভিযোগ আন্তর্জাতিক মহলেও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন এসব ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
তারিখ: ১৭.১১.২০২৪