রাঙামাটির ঘাগড়া উচ্চবিদ্যালয়, যেখানে পাহাড়ি মেয়েরা ফুটবলের স্বপ্ন নিয়ে সংগ্রাম করছে। এখান থেকেই জাতীয় ফুটবল তারকা ঋতুপর্ণা চাকমা, মনিকা চাকমা, ও রূপনা চাকমা উঠে এসেছেন। দারিদ্র্য আর অপুষ্টির সঙ্গে লড়াই করে ৩২ জন মেয়ে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। সীমিত সুযোগ-সুবিধা ও নিজস্ব উদ্যোগে চলছে তাদের প্রশিক্ষণ। তাঁদের লক্ষ্য, জাতীয় পর্যায়ে আরও তারকা তৈরি করা। তবে তাদের সামনে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ।
রাঙামাটি, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪: রাঙামাটির ঘাগড়া উচ্চবিদ্যালয় শুধুমাত্র একটি স্কুল নয়, এটি পাহাড়ি মেয়েদের ফুটবল শেখার আঁতুড়ঘর। এখান থেকেই জাতীয় ফুটবল তারকা ঋতুপর্ণা চাকমা, মনিকা চাকমা এবং রূপনা চাকমা উঠে এসেছেন। সীমিত সুযোগ-সুবিধা আর দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে ৩২ জন মেয়ে এখন ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নে কাজ করে যাচ্ছে।
ঘাগড়া উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে প্রতিদিন ভোরবেলায় কোচ শান্তিমণি চাকমার তত্ত্বাবধানে চলে মেয়েদের কঠোর প্রশিক্ষণ। যদিও মাঠ এবড়োখেবড়ো, তবে তাদের ক্লান্তি বলে কিছু নেই। এই দল থেকে জাতীয় তারকা তৈরি হওয়া যেন এক অনিবার্য প্রত্যাশা।
২০১১ সালে বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবলে নজর কাড়ে স্থানীয় মগাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেয়েরা। তাদের সাফল্যের মূলে ছিলেন প্রধান শিক্ষক বীরসেন চাকমা। পরে ২০১৩ সালে ঘাগড়া উচ্চবিদ্যালয়ে মেয়েদের ফুটবল দল গঠন করা হয়। এরপর থেকে এ বিদ্যালয় জাতীয় পর্যায়ে একাধিকবার চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছে।
তবে এই অর্জনের পেছনের গল্পটা মোটেও সহজ নয়। স্কুলের ৩২ জন মেয়ের জন্য রয়েছে মাত্র দুটি টিনের ছাউনি ঘর। সেই ঘরেই গাদাগাদি করে তাদের বাস। রান্নার জন্যও রয়েছে একটি ছোট ঘর। খাদ্য ও সরঞ্জামের বেশিরভাগ ব্যয় তাদের নিজস্ব টাকায় বহন করতে হয়। শুধু রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের দপ্তর থেকে দুই বেলার চালের ব্যবস্থা করা হয়।
সপ্তম শ্রেণির মিসতুই মারমা বলেন, “আমাদের বাড়ি থেকে রান্নার জন্য টাকা পাঠানো হয়। কিন্তু সবসময় তা আসে না। তখন অনেক কষ্ট হয়।” তৃষা চাকমা, তাঁর দুই যমজ বোন আমিষা ও মনিষা জাতীয় পর্যায়ে খেলার স্বপ্ন নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। বান্দরবানের মাফুচিন মারমা ও খাগড়াছড়ির চিন্তাদেবী ত্রিপুরার মতো মেয়েরা দারিদ্র্যকে উপেক্ষা করে ফুটবল খেলার জন্য ঘাগড়া স্কুলে এসেছে।
কোচ শান্তিমণি চাকমা বলেন, “২০১৬ সাল থেকে জাতীয় পর্যায়ে ফুটবলার তৈরি হচ্ছে এখান থেকে। তবে মেয়েদের অপুষ্টি ও দারিদ্র্য আমাদের জন্য বড় বাধা। ফুটবলার তৈরি করতে হলে কাঠামোগত সুবিধা প্রয়োজন। স্কুলটির সরকারীকরণ হলে এ সমস্যা অনেকটাই সমাধান হতে পারে।”
স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক শশীমণি চাকমা বলেন, “জাতীয় পর্যায়ের সাফল্যের পর মেয়েরা প্রশংসা পেলেও তাদের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা খুব কম আসে। নিয়মিত টুর্নামেন্ট বা সঠিক পুষ্টির ব্যবস্থা করতে পারলে আরও ফুটবল তারকা উঠে আসবে।”
আগামী সপ্তাহে সাফজয়ী তারকা ঋতুপর্ণা, মনিকা, রূপনা চাকমা ঘাগড়া স্কুলে এসে সংবর্ধনা দেবেন। তাঁদের সান্নিধ্যে অনুপ্রাণিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে নতুন প্রজন্ম। তারা বিশ্বাস করে, এই তারকাদের মতো তারাও একদিন জাতীয় দলে খেলবে এবং দেশের গৌরব বাড়াবে।
তারিখ: ১৫.১১.২০২৪