বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার যশোরেশ্বরী কালী মন্দির থেকে দেবী কালী মায়ের মুকুট চুরি যাওয়ার ঘটনাটি হিন্দু সম্প্রদায়কে মর্মাহত করেছে। মুকুটটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপহার হওয়ায় এর গুরুত্ব আরও বেড়েছে। এই ঘটনা সাধারণ চুরি নয়, বরং হিন্দুদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে এবং বাংলাদেশকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। চুরির ঘটনা এবং সাম্প্রতিক কালে হিন্দুদের ওপর চলা নির্যাতন এবং মন্দির ভাঙচুরের খবর এই ষড়যন্ত্রের দিকে ইঙ্গিত করছে। সুত্র: [আইএএনএস]
নয়াদিল্লি, ১১ অক্টোবর: বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার বিখ্যাত যশোরেশ্বরী কালী মন্দির থেকে দেবী কালী মায়ের মুকুট চুরি যাওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশ ও ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। দুর্গাপূজা, যা বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের সবচেয়ে বড় উৎসব, এই বছর শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে, তবে এই চুরির ঘটনা পূজার উত্সবের রেশ ম্লান করেছে।
মুকুটটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপহার, যা তিনি ২০২১ সালে তাঁর বাংলাদেশ সফরের সময় যশোরেশ্বরী মন্দিরে প্রদান করেছিলেন। এই মন্দিরটি ৫১টি শক্তিপীঠের একটি বলে হিন্দু পুরাণে বর্ণিত, যার ফলে এর ধর্মীয় গুরুত্ব অসীম। কালী মায়ের মুকুট চুরি হওয়ায় ভারত গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বাংলাদেশকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং চুরির তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছে।
এই চুরির ঘটনাটি অনেকেই স্রেফ একটি চুরির ঘটনা মনে করতে পারেন, তবে এই মুকুট চুরিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্র বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষত, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে হিন্দুদের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও মন্দিরে আক্রমণ বহুগুণে বেড়েছে। এই ষড়যন্ত্রের পেছনে বিভিন্ন উগ্রপন্থী ইসলামী দল জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যারা বাংলাদেশকে শরিয়াহ আইন দ্বারা পরিচালিত রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মন্দিরের সিসিটিভি ফুটেজে এক সন্দেহভাজনকে মন্দিরে ঢুকে কালী মায়ের মুকুট চুরি করতে দেখা গেছে। যদিও এটি সাধারণ চুরির ঘটনা বলে অনেকে মনে করছেন, কিন্তু সাম্প্রতিক কালে হিন্দুদের ওপর চলা নির্যাতন এবং মন্দির ভাঙচুরের খবর গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস দিচ্ছে। শেখ হাসিনার ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকেই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন, তাদের সম্পত্তি দখল এবং মন্দিরে আক্রমণের ঘটনা বেড়ে চলেছে।
দুর্গাপূজার সময় অনেক পূজা কমিটি থেকে অর্থ দাবি করা হয়েছিল এবং তাদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল যে, যদি ৫ লক্ষ টাকা না দেওয়া হয়, তবে তাদের পূজামণ্ডপ স্থাপন করতে দেওয়া হবে না। বিশেষ করে খুলনা জেলার বিভিন্ন পূজা কমিটিকে এই ধরনের হুমকি দিয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিরা চিঠি পাঠিয়েছিল। পূজার সময়ে বিভিন্ন মণ্ডপে প্রতিমা ভাঙচুরের খবরও এসেছে।
২০২১ সালেও মৌলবাদীর সঙ্গে যুক্ত একটি উগ্রপন্থী দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল যে, তারা দুর্গাপূজা মণ্ডপে একটি ইসলামিক ধর্মগ্রন্থ রাখার গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূত্রপাত করেছিল। সেই ঘটনার ফলে বাংলাদেশজুড়ে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে এবং পাঁচজন নিহত হয়। অনেক হিন্দু পরিবারের বাড়িঘরও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এসব ঘটনা শেখ হাসিনা সরকারের বিরোধিতা করে দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে এবং হিন্দুদের ভীতির মধ্যে রাখতে করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যশোরেশ্বরী মন্দিরের মুকুট চুরির ঘটনাটি মৌলবাদী দলের কাজ, যারা বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে এবং হিন্দুদের ওপর তাদের নির্ভরশীলতা ও ভীতির বার্তা দিতে চায়। এ ধরনের ঘটনা শুধু বাংলাদেশের হিন্দুদের নয়, ভারতসহ উপমহাদেশের সংখ্যালঘুদের জন্যও একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এ বছর বাংলাদেশের দুর্গাপূজা কিছুটা সংযতভাবে পালিত হয়েছে, যা এই বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে যে, হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি অন্তর্নিহিত ভয় এবং উদ্বেগ রয়েছে।
সুত্র: আইএএনএস
তারিখ ১২.১০.২০২৪