তাঁতীবাজারে পূজামণ্ডপে পেট্রলবোমা হামলা, ছুরিকাঘাতে আহত ৫

তাঁতীবাজারে পূজামণ্ডপে পেট্রলবোমা হামলা, ছুরিকাঘাতে আহত ৫

পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে দুর্গাপূজার মণ্ডপে শুক্রবার সন্ধ্যায় পেট্রলবোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। যদিও পেট্রলবোমাটি বিস্ফোরিত হয়নি, ঘটনার পরপরই পূজা উদ্‌যাপন কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরা হামলাকারীদের ধরার চেষ্টা করলে তারা পালানোর সময় ছুরিকাঘাত করে। এতে পাঁচজন আহত হন, যাদের মধ্যে চারজন স্বেচ্ছাসেবক এবং একজন দর্শনার্থী রয়েছেন।। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করেছে এবং ঘটনার তদন্ত চলছে। স্থানীয়দের মতে, পূজামণ্ডপে নাশকতার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়, তবে পুলিশ এটিকে ছিনতাইয়ের ঘটনা হিসেবে দেখতে চাইছে। আহতদের চিকিৎসা চলছে এবং তারা আশঙ্কামুক্ত আছেন।

ঢাকা, ১১ অক্টোবর: পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে শুক্রবার সন্ধ্যায় দুর্গাপূজার মণ্ডপে পেট্রলবোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, পূজামণ্ডপের পাশে একটি গলিতে কয়েকজন যুবক জড়ো হয়ে পূজামণ্ডপের মঞ্চ লক্ষ্য করে একটি কাচের বোতল ছুড়ে মারেন। সেই বোতলটিতে পেট্রল ছিল এবং তা থেকে সামান্য আগুন ধরে যায়। তবে বিস্ফোরণ ঘটেনি এবং কারও তেমন ক্ষতি হয়নি। ঘটনার পরপরই পূজা উদ্‌যাপন কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরা হামলাকারীদের ধরার চেষ্টা করলে তারা পালানোর সময় ছুরিকাঘাত করে। এতে পাঁচজন আহত হন, যাদের মধ্যে চারজন স্বেচ্ছাসেবক এবং একজন দর্শনার্থী রয়েছেন।

আহত ব্যক্তিরা হলেন দীপ্ত দে (২৬), ঝন্টু ধর (৫০), খোকন ধর (৪০), সাগর ঘোষ (২৬) ও মো. রমিজ উদ্দিন (৩০)। তাদের সবাইকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. লিটন জানান, তাদের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত।

এ ঘটনার পর পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং তিনজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে। আটক ব্যক্তিরা হলেন গাইবান্ধার আকাশ (২৩), পটুয়াখালীর মো. হৃদয় (২৩) ও নোয়াখালীর মো. জীবন (১৯)। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে এবং তারা বর্তমানে কোতোয়ালি থানা হেফাজতে আছেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক সাংবাদিকদের জানান, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এটি ছিনতাইয়ের ঘটনা। আমরা আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার প্রকৃত কারণ জানার চেষ্টা করছি।” তবে তাঁতীবাজার পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয় শাহ এ ঘটনার সঙ্গে ছিনতাইয়ের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান। তার মতে, এটি একটি পরিকল্পিত নাশকতার চেষ্টা ছিল এবং পূজামণ্ডপে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই এই হামলা করা হয়েছে।

এই ঘটনায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পূজামণ্ডপে উপস্থিত অনেকেই ভয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, পেট্রলবোমাটি মঞ্চের দিকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, কিন্তু বিস্ফোরিত না হওয়ায় বড় ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে।

পূজামণ্ডপে নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি পূজা উদ্‌যাপন কমিটির স্বেচ্ছাসেবকেরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাদের একজন স্বেচ্ছাসেবক জয় শাহ জানান, “হামলাকারীরা পালানোর সময় আমরা তাদের ধরার চেষ্টা করলে তারা আমাদের উপর আক্রমণ করে এবং ছুরিকাঘাত করে পালানোর চেষ্টা করে। এতে আমাদের চারজন স্বেচ্ছাসেবক এবং একজন দর্শনার্থী আহত হন।”

তাঁতীবাজার পূজামণ্ডপটি সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে। সেখানকার একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, তিনজন যুবক গলিতে জড়ো হয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন। এরপর তারা পূজামণ্ডপের কাছে এসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করেন।

পূজা উদ্‌যাপন কমিটি এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলছে।

তারিখ ১২.১০.২০২৪