রাজধানীর শ্রীশ্রী রমনা কালীমন্দির ও শ্রী মা আনন্দময়ী আশ্রমে দুর্গাপূজার মণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যরা। পরিদর্শন শেষে তাঁরা অভিযোগ করেছেন যে, মন্দিরটি ধর্মীয় পূজামণ্ডপের বদলে রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। মন্দিরের পূজা আয়োজনে রাজনৈতিক নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মঞ্চে দলীয় বক্তব্য রাখার প্রচেষ্টা ছিল, যা হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চেতনায় আঘাত হানছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ হিন্দু সমাজ মন্দির ও মণ্ডপ পরিচালনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করে, হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বারা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি পরিচালনা কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।
ঢাকা, ৯ অক্টোবর: আজ বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসংলগ্ন শ্রীশ্রী রমনা কালীমন্দিরে দুর্গাপূজার মণ্ডপ পরিদর্শনে আসেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যরা। তাঁদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমিনসহ অন্যান্য সদস্যরা। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে তাঁরা মন্দিরের পরিচালনা পরিষদের কার্যালয়ে যান এবং মন্দির পরিচালনা পরিষদের আহ্বায়ক অপর্ণা রায় দাসের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
এই সময় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মন্দিরের পরিবেশে পূজামণ্ডপের বদলে একটি দলীয় কার্যালয়ের ছাপ স্পষ্ট। তাঁরা মন্দিরের মঞ্চে রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য ও দলীয় প্রচার কার্যক্রমের উপস্থিতিতে হতাশা ব্যক্ত করেন। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “আজকে রমনা কালীমন্দিরে এসে এটিকে কোনো পূজামণ্ডপ মনে হচ্ছে না। এটিকে একটি দলীয় কার্যালয় বলে মনে হচ্ছে।” তিনি বলেন, “ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দখলের যে রাজনীতি বাংলাদেশে চলমান, এ ধরনের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের আহ্বান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে ধর্মীয় জায়গায়ই রাখা হোক, যেন এদের পবিত্রতা রক্ষা হয়।”
আজ সন্ধ্যায় রমনা কালীমন্দিরের পূজামণ্ডপে মহাষষ্ঠীর মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালনের জন্য মঞ্চে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর। মঞ্চ থেকে মাইকে বিএনপি ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ছাত্রদল ও যুবদলের নাম উল্লেখ করে বিভিন্ন বক্তব্য দেওয়া হয়। নাগরিক কমিটির সদস্যরা যখন মন্দিরে আসেন, তখন রুহুল কবির রিজভী মন্দিরে পৌঁছাননি। তবে, মন্দিরের পূজায় রাজনৈতিক নেতাদের অতিথি করার বিষয়টি নিয়ে নাগরিক কমিটির নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁর মতে, ধর্মীয় স্থানগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। এসব ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা উচিত।”
তিনি রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধর্মীয় জায়গাতেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের দাবি। আমরা চাই, হিন্দু সম্প্রদায়ের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই মন্দিরের দায়িত্ব পালন করবেন, যেন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পবিত্রতা ও ধর্মীয় ঐতিহ্য রক্ষা পায়।”
এদিকে, রমনা কালীমন্দিরের পূজায় বিভিন্ন দলীয় নেতাদের উপস্থিতি এবং তাঁদের বক্তব্যের বিষয়টি নিয়ে পূজা উদ্যাপন কমিটির মধ্যেও মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করেন, মন্দিরের মতো পবিত্র স্থানে রাজনৈতিক বক্তব্য রাখার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চেতনায় আঘাত হানে এমন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ হিন্দু সমাজের দাবী, “ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে এবং পূজামণ্ডপ ও মন্দিরের পরিচালনা কমিটি নির্বাচিত হওয়া উচিত হিন্দু সম্প্রদায়ের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।”
তারিখ ১০.১০.২০২৪