চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জের জে এম সেন হলে দুর্গাপূজার মণ্ডপে ইসলামি সংগীত পরিবেশনকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা ইসলামি সংগীত পরিবেশন করেন, যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিয়েছেন। মঞ্চে সংগীত পরিবেশনকারী সংগঠনের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, সংশ্লিষ্ট পক্ষ তা অস্বীকার করেছে।
চট্টগ্রাম, ১০ অক্টোবর: চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জের জে এম সেন হলে দুর্গাপূজার মণ্ডপে ইসলামি সংগীত পরিবেশন করা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির ছয়জন শিল্পী দুটি গান পরিবেশন করেন, যার একটি ছিল ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম’। এ ঘটনাটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে সন্ধ্যা সাতটার দিকে, যখন মণ্ডপে উপস্থিত কিছু দর্শক এই ইসলামি সংগীত পরিবেশনের ভিডিও তাদের মুঠোফোনে ধারণ করেন এবং তা ফেসবুকে শেয়ার করেন। প্রায় তিন মিনিটের ভিডিওতে দেখা যায়, মঞ্চে ছয়জন তরুণ ইসলামি সংগীত পরিবেশন করছেন। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর দ্রুত এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন অনেকে।
ঘটনার পরপরই, রাত সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম ঘটনাস্থলে যান। তিনি পূজামণ্ডপের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন এবং দ্রুত এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন। ডিসি ফরিদা খানম বলেন, “এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদেরকে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করা হবে। পুলিশ কমিশনারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে, রাতের মধ্যেই মামলা নেওয়া হবে।”
এই বিতর্কিত ঘটনাটি নিয়ে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম জামান প্রথম আলোকে বলেন, “আমরা পূজা উদ্যাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণে সেখানে সংগীত পরিবেশন করতে গিয়েছিলাম। সেখানে সম্প্রীতির গান গাওয়া হয়েছে, কেউ যদি তা ভুলভাবে উপস্থাপন করে থাকে, সেটি তাদের দোষ।”
তবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও যাচাই করে ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার জানিয়েছে যে, পূজামণ্ডপে পরিবেশিত গানের ভিডিওটি আসল এবং এডিটেড নয়।
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানানো হয়। তবে, জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতা নিশ্চিত করেন যে, চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি একটি জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত সাংস্কৃতিক সংগঠন।
এই ঘটনা সম্পর্কে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের অর্থ সম্পাদক সুকান্ত মহাজন বলেন, “কয়েকজন তরুণ এসে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করার কথা বলে মঞ্চে ওঠেন। তারা দুটি গান গেয়ে মঞ্চ থেকে নেমে যান। তাদের গান পরিবেশনের সময় কেউ তাদের বাধা দেয়নি বা প্রতিবাদ করেনি।”
অন্যদিকে, পূজা উদ্যাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ঘটনাস্থলে চট্টগ্রামের আদালত ঘোষিত সিটি মেয়র এবং নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন উপস্থিত ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। তবে, শাহাদাত হোসেন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিতর্কিত এই ঘটনার পর পূজামণ্ডপে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন।
তারিখ ১১.১০.২০২৪