বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) জানিয়েছে, তারা ক্ষমতায় এলে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত প্রতিটি নির্যাতনের ঘটনার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। বুধবার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দুর্গাপূজা পরিদর্শনকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আট দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান এবং অতীতের মতো ভবিষ্যতেও তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। মির্জা ফখরুল বলেন, একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সদস্যরাই অতীতে সংখ্যালঘুদের জমি ও সম্পত্তি দখলের সাথে জড়িত ছিল। তিনি আরও দাবি করেন, ক্ষমতায় গেলে বিএনপি প্রতিটি নির্যাতনের ঘটনা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করবে এবং প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
ঢাকা, ৯ অক্টোবর: বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) বুধবার জানিয়েছে, তারা ক্ষমতায় এলে দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সংঘটিত প্রতিটি নির্যাতনের ঘটনার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দুর্গাপূজা পরিদর্শনকালে এই প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, “আপনারা [হিন্দু সম্প্রদায়] যে আট দফা দাবি উত্থাপন করেছেন, আমরা সেগুলোর প্রতি পূর্ণ সহানুভূতি জানাচ্ছি এবং যথাযথ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা অতীতেও আপনাদের পাশে ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও একইভাবে পাশে থাকব। আমরা আপনাদের যে কোনো সংকটে সহায়তা করেছি এবং ভবিষ্যতেও সমর্থন দিয়ে যাব।” মির্জা ফখরুল দাবি করেন, যে রাজনৈতিক দলটি (পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে) সংখ্যালঘুদের সবচেয়ে বড় রক্ষক হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করে, তাদেরই সদস্যরা অতীতে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অধিকাংশ নির্যাতনের সাথে জড়িত ছিল।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমি ও সম্পত্তি দখলের ঘটনাতেও ওই দলের নেতাকর্মীরা জড়িত ছিল।” তবে, তিনি কোনো নির্দিষ্ট নাম উল্লেখ করেননি।
বিচার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি
মির্জা ফখরুল বলেন, “যদি আমাদের দল ভবিষ্যতে সরকার গঠন করে, তাহলে প্রতিটি নির্যাতনের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করা হবে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। আমাদের লক্ষ্য হবে দোষীদের যথাযথ শাস্তি দেওয়া।”
তিনি আরও বলেন, কিছু বিদেশি মিডিয়া বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার লক্ষ্যে পক্ষপাতমূলক এবং মিথ্যা সংবাদ প্রচার করছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, “আমি বলছি না যে কিছুই ঘটেনি। কিছু ঘটনা ছিল, তবে সবই সাম্প্রদায়িক নয়, অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো ছিল রাজনৈতিক ঘটনা।”
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আট দফা দাবি
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা দুর্গাপূজা উদযাপনের শুরুতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আট দফা দাবি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, “সংখ্যালঘুদের প্রতি সংঘটিত অন্যায় ও নিপীড়নের ন্যায়বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
এই আট দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: সংখ্যালঘুদের জমি ও সম্পত্তি দখলের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এবং বিচার প্রক্রিয়াকে দ্রুত কার্যকর করা। সন্তোষ শর্মা আরও বলেন, “আমরা চাই আমাদের অধিকার রক্ষা করা হোক এবং যে কোনো ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক।”
অতীতের ঘটনাগুলোর প্রতি ইঙ্গিত
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের দল অতীতেও সংখ্যালঘুদের পাশে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।” তিনি আওয়ামী লীগের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, “যে দল নিজেদের সংখ্যালঘুদের রক্ষক বলে দাবি করে, তাদেরই নেতাকর্মীরা অধিকাংশ নির্যাতনের ঘটনার পেছনে ছিল।”
তিনি বলেন, “আমরা ক্ষমতায় গেলে, প্রতিটি ঘটনা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা হবে এবং প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হবে।” মির্জা ফখরুল এই প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করেন এবং জানান, “আমাদের মূল লক্ষ্য হবে সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।”
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জ
মির্জা ফখরুল উল্লেখ করেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিটি ঘটনা যাতে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে নিরপেক্ষভাবে সমাধান করা হয়, সেই লক্ষ্যে তারা একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন। তিনি আরও জানান, “বিএনপি সংখ্যালঘুদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
বক্তব্যের শেষে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে চাই, যেখানে সবাই সমান অধিকার ভোগ করতে পারবে। আমাদের সরকার হবে সংখ্যালঘু-বান্ধব এবং তাদের অধিকার রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।”
আলোচনার সময় অন্যান্য বক্তারাও সংখ্যালঘুদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন এবং তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেন।
তারিখ ১০.১০.২০২৪