বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সরকার পরিবর্তনের পর থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে হিন্দুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্গাপূজাকে ঘিরে বিভিন্ন হুমকি, প্রতিমা ভাঙচুর এবং জোরপূর্বক চাঁদা দাবির মতো ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। বাংলাদেশ সরকার পূজা চলাকালীন সময়ে আযান চললে পূজার কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে, যা স্থানীয় উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে আরও উৎসাহিত করছে। এই পরিস্থিতির ফলে অনেক সংখ্যালঘু শরণার্থী ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে শরণার্থীদের প্রবেশ বেড়েছে, যা সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট হচ্ছে। সূত্র: [টাইমস অফ ইন্ডিয়া]
নয়াদিল্লী, ৯ অক্টোবর: বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সরকার পরিবর্তনের পর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে, শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর চাঁদা দাবি, হুমকি, এবং পূজামণ্ডপে হামলার মতো ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। বাংলাদেশের স্থানীয় উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলো বিভিন্ন পূজামণ্ডপে জোর করে চাঁদা আদায় করছে এবং পূজা চলার অনুমতি দেওয়ার শর্তে মন্দির ও পূজা কমিটিগুলোর কাছ থেকে ‘প্রোটেকশন মানি’ দাবি করছে। এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বরং, বাংলাদেশ সরকার একটি বিতর্কিত নির্দেশ জারি করেছে, যেখানে পূজা চলাকালীন আযান চললে পূজার কার্যক্রম স্থগিত রাখার কথা বলা হয়েছে। এই ধরনের সরকারি নির্দেশনার ফলে উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলো পূজার কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছে।
এই পরিস্থিতিতে অনেক হিন্দু শরণার্থী বিভিন্ন উপায়ে ভারত সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছে। দালালরা উভয় পক্ষের সীমান্তে শরণার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে এবং এই অমানবিক অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে শরণার্থীদের প্রবেশ বেড়েছে এবং রাজ্য সরকারগুলো এ নিয়ে কেন্দ্রের ওপর দায় চাপাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড সরকারের দাবি, সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী (BSF) কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে, তাই সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ করা তাদের দায়িত্ব।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতার কারণে সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই এ ধরনের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা একটি সুপরিকল্পিত চক্রান্তের অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর উচিত ছিল সম্ভাব্য শরণার্থী প্রবাহের বিষয়ে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া। কিন্তু বাস্তবে এমন কোনো পরিকল্পনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে শরণার্থীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, কিন্তু আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও মেঘালয়ের মতো রাজ্যগুলোতে এই সংখ্যা কম। এর কারণ এই রাজ্যগুলোর সরকার অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
পশ্চিমবঙ্গে ১৯৫১ সালে মুসলিম জনসংখ্যার হার ছিল ২০% (প্রায় ৫.১ মিলিয়ন), যা ২০১১ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭% (প্রায় ২৪.৬ মিলিয়ন)। এর পেছনে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ থেকে মুসলিম শরণার্থীদের অনুপ্রবেশ অন্যতম কারণ। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের পর এই সংখ্যা ৩০ মিলিয়ন অতিক্রম করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই সমস্যার দিকে চোখ বুজে আছে, যা ভবিষ্যতে রাজ্যের সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে।
ভারত সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) প্রণয়ন করেছে, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রতিবেশী দেশগুলোর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের সুরক্ষা ও নাগরিকত্ব প্রদান। এই আইনের আত্তা ও উদ্দেশ্য স্পষ্ট—বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে আসা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সুতরাং, ভারতের উচিত ছিল এই ধরনের শরণার্থীদের জন্য পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং বৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের আশ্রয় প্রদান করা। তাদেরকে অস্থায়ী শিবিরে রাখার ব্যবস্থা এবং সঠিক যাচাই-বাছাইয়ের পর বৈধভাবে তাদের আশ্রয় দেওয়া উচিত ছিল, যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি বা গোষ্ঠী প্রবেশ করতে না পারে।
সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী (BSF) এবং স্থানীয় প্রশাসনকে একযোগে কাজ করার প্রয়োজন ছিল। ৪,১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে প্রতিটি গজে প্রহরী বা চেকপয়েন্ট বসানো অসম্ভব, কিন্তু আকাশপথে নজরদারি, হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো যেতে পারত। এর ফলে শরণার্থীদের অবৈধ প্রবেশ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হতো। বাস্তবে এই ধরনের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে প্রমাণ নেই।
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ডে শরণার্থীদের অবাধ প্রবেশ একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধুমাত্র সংখ্যালঘু হিন্দু বা খ্রিস্টান নয়, বরং মুসলিম শরণার্থীদেরও প্রবেশ বেড়েছে। ভারতে আসা এসব শরণার্থীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ কীভাবে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মিশে যাবে, তা একটি গুরুতর প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের উচিত ছিল সংখ্যালঘু শরণার্থীদের গ্রহণ ও নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আগে থেকেই একটি সুসংগঠিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা, যা বর্তমানে অনুপস্থিত।
বর্তমান পরিস্থিতিতে, সব শরণার্থীকে অনায়াসে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া যাবে না। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর প্রায় ১.৫ মিলিয়ন শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল এবং তাদের নিয়ে আজও সমস্যা চলছে। তাই আবার সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি করা উচিত নয়। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ১৭ মিলিয়ন (৭.৯% হিন্দু এবং ১.১% অন্যান্য) লোক যদি সহজেই ভারতে প্রবেশের সুযোগ পায়, তবে এটি দেশের নিরাপত্তার জন্য বড় সংকট হতে পারে। সুতরাং, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে একসঙ্গে সমন্বয় করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং CAA আইনের আত্তা বজায় রেখে একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজতে হবে।
সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
তারিখ ১০.১০.২০২৪