দুর্গাপূজা: প্রতিমা ভাঙচুর, মারামারির - গ্রেপ্তার ৮

দুর্গাপূজা: প্রতিমা ভাঙচুর, মারামারির - গ্রেপ্তার ৮

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে আট দিনে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দেশের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে প্রতিমা ভাঙচুর, চুরি, মারামারি এবং ঢিল নিক্ষেপের মতো ঘটনাগুলোর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা এবং ২১টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, পূজামণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পূজামণ্ডপের সুরক্ষায় মোতায়েন করা হয়েছে ৭৫ হাজারের বেশি পুলিশ এবং ২ লাখেরও বেশি আনসার সদস্য।

ঢাকা, ৯ অক্টোবর: বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া প্রতিমা ভাঙচুর, চুরি, ঢিল নিক্ষেপ এবং সংঘর্ষের ঘটনায় গত আট দিনে আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসব ঘটনায় মোট ১৭টি মামলা এবং ২১টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ১ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত দেশজুড়ে ৪৭টি পূজামণ্ডপে হামলা, ভাঙচুর, চুরি এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সময় ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে মানসিক ভারসাম্যহীন এবং মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা। এ ধরনের ঘটনা হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে এবার ৩২ হাজার ৬৬৬টি পূজামণ্ডপ রয়েছে। নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে মণ্ডপগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে—সাধারণ, গুরুত্বপূর্ণ এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৬৩৯টি সাধারণ মণ্ডপ, ১০ হাজার ৯২৯টি গুরুত্বপূর্ণ এবং ৮ হাজার ৯৮টি অতি গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব মণ্ডপের নিরাপত্তায় ৭৫ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য এবং ২ লাখ ১২ হাজার ১৯২ জন আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অতি গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপগুলোতে ৮ জন আনসার সদস্য এবং গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ মণ্ডপগুলোতে ৬ জন করে আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান থাকা সত্ত্বেও, বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ১ অক্টোবর রংপুরের কোতোয়ালি ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সুন্দরগঞ্জের ঘটনায় ভবেশ চন্দ্র দাস নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জানায়, ভবেশ মানসিক ভারসাম্যহীন এবং মাদকাসক্ত। বাঁশ দিয়ে আঘাত করে তিনি দুর্গা প্রতিমার মাথা ভেঙে দেন।

২ অক্টোবর সুনামগঞ্জের দোয়ারবাজারে পূজামণ্ডপের সামনে নাচ-গানের সময় দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে থানায় একটি জিডি হয়। একই দিনে পাবনার সুজানগরে পাঁচটি প্রতিমার মাথা ভাঙা অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। নড়াইল সদরেও একটি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙার ঘটনা ঘটে।

৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ সদরে প্রতিমা ভাঙচুরের অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার করা হয়। ৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জ সদরে পূজার চাঁদা নিয়ে মন্দিরের দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এতে দুই ব্যক্তি আহত হন। একই দিনে বরিশালের বাকেরগঞ্জের একটি মন্দিরে প্রতিমার বিভিন্ন অংশ ভাঙা অবস্থায় পাওয়া যায়। এর ফলে ওই এলাকার থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়।

৬ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রতিমার একটি অংশ ভাঙার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই দিনে নীলফামারীর ডিমলায় একটি মাটির ঢিবি ভাঙা অবস্থায় পাওয়া যায়, যা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি অথবা দুর্ঘটনাজনিত কারণে ভেঙে থাকতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়াতেও প্রতিমার উদ্দেশ্যে ইটের টুকরো নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

৭ অক্টোবর খাগড়াছড়ির রামগড়ে মন্দিরের প্রতীক চুরির অভিযোগ পাওয়া যায়। পরদিন, ৮ অক্টোবর রাজবাড়ীর কালুখালীতে ভারী বর্ষণের কারণে মন্দিরের দেয়াল ধসে পড়লে প্রতিমার মাথা এবং হাত ভেঙে যায়। একই দিনে সাতক্ষীরার আশাশুনিতে এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি পূজামণ্ডপে ঢিল ছুঁড়লে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৯ অক্টোবর রংপুরের গঙ্গাচড়া এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করায় রফিকুল নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়, “দুর্গাপূজা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা নেই। তবে, আমরা সতর্ক রয়েছি। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কেউ কোনো ধরনের অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পূজা উপলক্ষে প্রতিটি মণ্ডপে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। তবে, হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করে কেবল ধর্মীয় পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। সম্প্রদায়ের নেতারা জানান, এ ধরনের আক্রমণ শুধু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে না, এটি সামাজিক ঐক্য ও সম্প্রীতির পরিবেশকেও নষ্ট করে।

পুলিশের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পূজামণ্ডপে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার করার জন্য প্রশাসনের তরফ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন পূজামণ্ডপগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তাঁদের সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন।

তারিখ ১০.১০.২০২৪