রংপুর, ২৫ সেপ্টেম্বর: রংপুর শহরের দাসপাড়ায় মোসলেম উদ্দিন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে হিন্দু ছাত্রীদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করার অভিযোগে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোফিজুর রহমান ও ধর্মীয় শিক্ষক মোস্তাফিজার রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রেজাউল করিম জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রংপুর শহরের দাসপাড়ার মোসলেম উদ্দিন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে হিন্দু ছাত্রীদের হিজাব পরতে বাধ্য করার অভিযোগে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বুধবার দুপুরে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে। এ ঘটনার জেরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান শিক্ষক মোফিজুর রহমান এবং ধর্মীয় শিক্ষক মোস্তাফিজার রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং ১০ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছে।
বুধবারের বিক্ষোভে শতাধিক হিন্দু ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকেরা অংশগ্রহণ করেন। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয় এবং স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
বিক্ষোভরত ছাত্রীদের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষক ও ধর্মীয় শিক্ষক মোস্তাফিজার রহমান তাঁদেরকে হিজাব পরতে বাধ্য করার চেষ্টা করছিলেন এবং এই বাধ্যবাধকতা মানতে না চাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপে রাখা হয়। ছাত্রীদের দাবি, ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে কাউকে কোনো পোশাক পরতে বাধ্য করা উচিত নয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম এবং পরিস্থিতি শান্ত রাখতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনা করেছি। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”
বিক্ষোভের সময় ছাত্রীদের অভিযোগের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে আরও বেশি মানুষ এই বিষয়ে অবগত হন। ভিডিওতে কয়েকজন ছাত্রীকে হিজাব পরার বাধ্যবাধকতার কথা বলতে দেখা যায়, যা রংপুরের স্থানীয় জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করে। এতে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ও বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, “বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা লিখিতভাবে অভিযোগ করেছে যে, প্রধান শিক্ষক ও ধর্মীয় শিক্ষক তাঁদের ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গিয়ে হিজাব পরতে বাধ্য করার চেষ্টা করেছেন। শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর, তাই আমরা বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “গতকাল (বুধবার) বিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতি জানার পর আমি নিজে সেখানে ছুটে যাই এবং সেনাবাহিনীর সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করি। পরবর্তীতে বিদ্যালয়ে বসেই অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ও ধর্মীয় শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। এর ফলে পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত হয়।”
ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক মোফিজুর রহমানকে যোগাযোগ করা হলে তিনি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। অন্যদিকে, ধর্মীয় শিক্ষক মোস্তাফিজার রহমানের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক ও ধর্মীয় শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে শ্লোগান দেয় এবং তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানায়। শিক্ষার্থীদের পক্ষে অভিভাবকরা বলেন, “আমাদের মেয়েদেরকে ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো কিছু করতে বাধ্য করা হবে, এটা আমরা মানতে পারি না। বিদ্যালয়ের পরিবেশকে শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখতে এবং শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা চাই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
এই ঘটনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছে এবং অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠানো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে, জেলা প্রশাসন আশ্বস্ত করেছে যে, দ্রুত তদন্ত করে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ ২৬.০৯.২০২৪