রাঙ্গামাটি, ২৩ সেপ্টেম্বর: রাঙ্গামাটিতে মৈত্রী বিহারে ভাঙচুর, লুটপাট এবং সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ। ২০ সেপ্টেম্বর ঘটে যাওয়া এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সংগঠনটি সোমবার সকালে মৈত্রী বিহারে এক সংবাদ সম্মেলন করে তাদের দাবি জানায়। এসময় সংঘবদ্ধ হামলায় বিহারের সম্পত্তি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং দুটি দানবাক্স লুট করা হয়। স্বাধীন ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে এসব হামলার নিন্দা জানিয়ে তারা দ্রুত বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপ ও ক্ষতিপূরণের দাবি করেন। (সূত্র: পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ)
রাঙ্গামাটির মৈত্রী বিহারে সাম্প্রদায়িক হামলা, ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনার দ্রুত বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ। সোমবার সকালে মৈত্রী বিহারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এই দাবি তুলে ধরা হয়। ভিক্ষুরা জানান, ২০ সেপ্টেম্বরের হামলায় বিহারের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করা হয় এবং বুদ্ধমূর্তি ভাঙচুর, ত্রিপিটক ছিঁড়ে ফেলা ও আসবাবপত্রসহ বিহারের বিভিন্ন সম্পত্তি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একই সঙ্গে দানবাক্স লুট করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সভাপতি শ্রদ্ধালঙ্কার মহাথের লিখিত বক্তব্যে বলেন, “২০ সেপ্টেম্বর একদল দুর্বৃত্ত দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে মৈত্রী বিহারে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। তারা বিহারের বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র এবং বুদ্ধমূর্তি ভেঙে ফেলে। এমনকি ত্রিপিটকের পবিত্র গ্রন্থও ছিঁড়ে ফেলা হয়, যা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে।” এছাড়াও তিনি বলেন, “আমরা একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও ধর্মনিরপেক্ষ দেশে বাস করি, যেখানে এ ধরনের হামলা সহ্য করা যায় না। তাই আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।”
হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বিহারের সম্পত্তি পুনঃস্থাপনের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবিও জানান তিনি। একই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রতিককালের অন্যান্য ঘটনারও তদন্তের দাবি করেন, বিশেষ করে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাগুলোতে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য পার্বত্য চুক্তির সঠিক বাস্তবায়ন ও পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতন্ত্র নিশ্চিত করা জরুরি। তারা সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান, যাতে এ ধরনের হামলা ভবিষ্যতে আর না ঘটে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য উপস্থিত ভিক্ষুরাও এই ঘটনার নিন্দা জানান। পূণ্যজ্যোতি মহাথের, শীলানন্দ মহাথের, নাইন্দাচারা মহাথের, শীলজ্যোতি মহাথের এবং মৈত্রী বিহারের সভাপতি পূর্নেন্দু বিকাশ চাকমা এই দাবিতে একাত্মতা প্রকাশ করেন। তাদের মতে, এই ধরনের হামলা শুধু ধর্মীয় সম্প্রীতিতে আঘাত নয়, বরং সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি স্বরূপ।
এ ধরনের ঘটনা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে এবং পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত বিভিন্ন ধর্ম ও জাতিসত্তার মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বক্তারা। তারা উল্লেখ করেন, সরকার ও প্রশাসনকে এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
মৈত্রী বিহারের ঘটনায় দায়ের করা মামলার দ্রুত তদন্তের দাবিতে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানায়। তারা আরও বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করছে এবং এই সম্প্রীতি নষ্ট করার যেকোনো অপচেষ্টার বিরুদ্ধে তারা একযোগে প্রতিরোধ করবে।
সংবাদ সম্মেলনের শেষে বক্তারা আরও জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ সম্প্রদায় এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ এবং তারা সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন, যাতে ধর্মীয় সহিংসতা বন্ধ হয় এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকে।
সূত্র: একাত্তর টিভি
তারিখ ২৪.০৯.২০২৪