ময়মনসিংহ, ২১ সেপ্টেম্বর: ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় এক হিন্দু পরিবারের পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জোরপূর্বক দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবদল নেতার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী পরিবার দাবি করেছে, ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কবিরুল ইসলাম ওরফে টিটু তাঁদের পাঁচটি দোকানঘর দখল করে নিয়েছেন এবং তাঁদের জীবিকা নির্বাহের পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। দোকানঘর দখলের প্রতিবাদে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার স্থানীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাঁদের কষ্ট ও দুর্দশার কথা তুলে ধরেন।
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার পঞ্চনন্দপুর মোড়ে এক হিন্দু পরিবারের পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জোরপূর্বক দখল করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কবিরুল ইসলাম ওরফে টিটুর বিরুদ্ধে। অভিযোগ অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ৬ আগস্ট কবিরুল তাঁর কয়েকজন সহযোগী নিয়ে দোকানঘরগুলোতে জোরপূর্বক তালা লাগিয়ে দেন এবং নিজেদের জমি দাবি করে দোকানের সামনে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন।
আজ শনিবার দুপুরে ধোবাউড়া প্রেসক্লাবে ভুক্তভোগী পরিবার সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতুল সরকার, তাঁর ভাই অখিল সরকার ও ভাতিজা পলাশ সরকার। লিখিত বক্তব্যে অতুল সরকার জানান, ১৯৯৭ সালে তাঁর পরিবার মৃত শাহেদ আলী মুন্সির কাছ থেকে ১৫ শতক জমি কিনে সেখানে দোকান নির্মাণ করেন। ২০০৮ সালেও একই যুবদল নেতা জমির মালিকানা দাবি করে সমস্যার সৃষ্টি করেছিলেন, কিন্তু তখন স্থানীয়ভাবে সালিসে তাঁদের পক্ষে রায় আসে।
অতুল সরকার বলেন, “আমরা জমির প্রকৃত মালিকের কাছ থেকে জমি কিনেছি। ১৯৯৭ সাল থেকে আমাদের দোকানগুলোতে ব্যবসা করে আসছি। কিন্তু কবিরুল রাজনৈতিক ক্ষমতা পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে আমাদের দোকানগুলো দখল করে নিয়েছে। এ নিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আগে সালিসও হয়েছিল এবং সেখানে আমাদের মালিকানা প্রমাণিত হয়।”
তিনি আরও বলেন, “দোকানগুলো জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছি। আমাদের পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস এই দোকানগুলো। কিন্তু এখন দোকানগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় পরিবারে অভাব-অনটন দেখা দিয়েছে। আমরা আইনানুগ বিচার চাই, যেন আমাদের দোকানগুলো ফেরত পাই।”
সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরপরই উপজেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কবিরুল ইসলাম দলীয় কিছু সহযোগী নিয়ে দোকানঘরগুলোর সামনে হাজির হন। এরপর তারা দোকানের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে সবকিছু জোর করে দখলে নিয়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন। তাঁদের দাবি, জমির প্রকৃত মালিকানা তাঁদের কাছে থাকা দলিলপত্রে প্রমাণিত।
অতুল সরকার আরও বলেন, “২০০৮ সালে কবিরুল তিন শতক জমি কেনার দাবি করেছিল। তখনও স্থানীয়ভাবে সালিসে বসে তাঁর দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতার পরিবর্তনের পর আবার আমাদের দোকানগুলো দখল করে নিয়েছে। আমাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার কোনো উপায় নেই বলে মনে হচ্ছে। একদিকে প্রশাসন নীরব, অন্যদিকে আমরা প্রতিদিন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।”
অতিরিক্ত চাপ ও উৎকণ্ঠার মধ্যেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এখনো আইনি ও প্রশাসনিক সহযোগিতা পাওয়ার আশায় আছে। পরিবারের সদস্যরা জানান, জমির প্রকৃত মালিকের কাছ থেকে তাঁরা জমি কিনেছিলেন এবং সে সময়ের সব কাগজপত্র তাঁদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। তবে এখন আবার নতুন করে জমির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা তাঁদের হতাশ করে তুলছে।
ধোবাউড়ার স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, জমির প্রকৃত মালিকানা নির্ধারণে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং দুই পক্ষের দাবির সঠিকতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি এখনো তাঁদের দোকানগুলো ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাঁরা প্রশাসন ও স্থানীয় জনগণের কাছে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাঁদের সমস্যার সমাধান চান।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ ২৬.০৯.২০২৪