ময়মনসিংহ, ২৬ সেপ্টেম্বর: ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শ্রীশ্রী গোবিন্দ জিউর মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ভোররাতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর একজনকে আটক করা হয়েছে, যিনি মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দাবি করা হচ্ছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি পঙ্কজ পাল। তবে প্রশাসনের কার্যকরী পদক্ষেপ এখনো দৃশ্যমান হয়নি। সংখ্যালঘুদের পক্ষ থেকে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার শ্রীশ্রী গোবিন্দ জিউর মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ভোররাতে মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর করা হয়। এই ঘটনায় মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। ঘটনার পরে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে মন্দির প্রাঙ্গণে জড়ো হন এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি পঙ্কজ পাল ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ভোরের দিকে অজ্ঞাতপরিচয় কিছু লোক মন্দিরের গেটে ঢুকে প্রতিমা ভাংচুর করে। পরবর্তীতে স্থানীয়রা বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে একজনকে আটক করে। আটককৃত ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত না করা গেলেও তাকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে স্থানীয়রা এই দাবি নিয়ে সন্দিহান এবং ঘটনাটির পেছনে অন্য কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা, তা তদন্তের দাবি তুলেছেন।
সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ জানান, “আমাদের মন্দির ও ধর্মীয় স্থাপনাগুলোতে এ ধরনের আক্রমণ একের পর এক ঘটছে। কিন্তু প্রতিবারই প্রশাসন দোষীদের মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দায় এড়িয়ে যায়। এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে প্রশাসনের আরও কঠোর ভূমিকা প্রয়োজন।”
ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা দেখেন, মন্দিরের প্রধান প্রতিমাটি সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং মন্দিরের অন্যান্য স্থাপনায়ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মন্দিরের পুরোহিত জানান, “এই মন্দিরটি এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের একমাত্র উপাসনাস্থল। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এখানে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা-অর্চনা করে আসছি। কিন্তু এমন ঘটনা আমাদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে বাধ্য করছে।”
প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনার পর থেকেই এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে এবং তাঁরা প্রশাসনের কার্যকরী পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা রতন চন্দ্র দাস বলেন, “এ ধরনের ঘটনা আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে। প্রশাসন যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।”
প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আটককৃত ব্যক্তির মানসিক অবস্থার পরীক্ষা করা হবে এবং এ ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করা হবে। গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, “আমরা প্রাথমিকভাবে মনে করছি, আটককৃত ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। ঘটনার পেছনে যদি অন্য কোনো কারণ থেকে থাকে, তাহলে আমরা দোষীদের আইনের আওতায় আনব।”
এদিকে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন প্রশাসনের কার্যকরী পদক্ষেপের অভাব নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের দাবি, “প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটার পরও প্রশাসন এখনো কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা সুষ্ঠু বিচার চাই এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”
এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসন দ্রুত উদ্যোগ নেবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। সংখ্যালঘু প্রতিনিধিরা আশা করছেন, সরকার সংখ্যালঘুদের প্রতি তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করবে যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর না ঘটে।
সূত্র: সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন
তারিখ ২৬.০৯.২০২৪