খুলনা, ২১ সেপ্টেম্বর: খুলনার দাকোপ উপজেলায় দুর্গাপূজা উদযাপন করতে চাইলে প্রতিটি মন্দিরকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে—এমন একটি উড়োচিঠি পেয়েছেন বিভিন্ন মন্দির কমিটির নেতারা। এই চাঁদা না দিলে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি প্রশাসন বা সাংবাদিকদের জানালে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। উড়োচিঠি পাওয়ার পর থেকে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। কিছু মন্দির সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এ বছর পূজা উদযাপন করবে না। এরই মধ্যে চারটি মন্দির থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
খুলনার দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন মন্দিরে দুর্গাপূজা উদযাপন করতে হলে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে—এমন হুমকিসহ উড়োচিঠি পেয়েছেন মন্দির কমিটির নেতারা। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যদি এই চাঁদা না দেওয়া হয়, তবে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। চাঁদা না দিলে এবং বিষয়টি প্রশাসন বা সাংবাদিকদের জানালে কচুকাটা করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এতে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। কিছু মন্দির ইতোমধ্যে পূজা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত বুধবার বিভিন্ন মন্দিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছে এই উড়োচিঠি পাঠানো হয়। শুক্রবার পর্যন্ত অন্তত চারটি মন্দির থেকে দাকোপ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। চিঠি পাওয়ার পর স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। মন্দির কমিটির নেতারা চিঠির হুমকির বিষয়ে গভীর চিন্তায় আছেন এবং অনেকেই পূজা উদযাপন না করার পক্ষে মত দিয়েছেন। কয়েকটি মন্দির ইতিমধ্যে পূজা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দাকোপ উপজেলার কামারখোলা সর্বজনীন দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শেখর চন্দ্র গোলদার জানান, এবছর পূজা ছোট আকারে করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু উড়োচিঠি পাওয়ার পর অনেক সদস্যই আগ্রহ হারিয়েছেন এবং এ বছর পূজা বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। একইভাবে, দাকোপের রামনগর ঠাকুরবাড়ি দুর্গাপূজা মণ্ডপের আয়োজকরাও একই ধরনের চিঠি পেয়েছেন।
চিঠিগুলো কম্পিউটারে কম্পোজ করা এবং হলুদ খামে পাঠানো হয়েছে। চিঠিগুলোর ভাষা প্রায় একই ধরনের, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘হানিফের প্রজেক্টে যেমন করেছি, তোদের পরিণতিও তেমন হবে।’ স্থানীয়দের মতে, হানিফের প্রজেক্ট বলতে বোঝানো হয়েছে গত ৫ আগস্টের একটি ঘটনা, যেখানে সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতা মাহবুব উল আলম হানিফের চিংড়িঘেরে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনা থেকেই এই চিঠির হুমকির উৎস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দাকোপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, চারটি মন্দির থেকে এই উড়োচিঠির বিষয়ে জিডি করা হয়েছে এবং বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মন্দিরগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত টহল দিচ্ছেন। স্থানীয় গ্রাম পুলিশ এবং ইউনিয়নভিত্তিক পুলিশ কর্মকর্তারাও সার্বক্ষণিক টহলে আছেন।
উড়োচিঠির ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে। অনেকে পূজা উদযাপন বন্ধ রাখার কথা চিন্তা করছেন, তবে প্রশাসনের আশ্বাসে কিছু মন্দির এখনো পূজা উদযাপনের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সচেষ্ট রয়েছে।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ ২১.০৯.২০২৪