খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত

খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত

খাগড়াছড়ি, ১৯ সেপ্টেম্বর: খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলায় পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে সংঘর্ষের পর বৃহস্পতিবার রাতে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে তিনজন নিহত এবং অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে জুনান চাকমা, ধনঞ্জয় চাকমা ও রুবেল চাকমা রয়েছেন। সংঘর্ষের ফলে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে, এবং স্থানীয়রা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইন্টারনেট সেবা সীমিত করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি শান্ত করতে প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে।

খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলায় পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষের জের ধরে বৃহস্পতিবার রাতে খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন জুনান চাকমা (২০), ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) ও রুবেল চাকমা (৩০)।

গোলাগুলির ঘটনার সূত্রপাত হয় বৃহস্পতিবার বিকেলে দীঘিনালা লারমা স্কয়ার এলাকায় পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে সংঘর্ষের পর। স্থানীয় সূত্র জানায়, বুধবার রাতে মোহাম্মদ মামুন নামের এক ব্যক্তিকে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মারধরের ঘটনা ঘটে। মামুন বৃহস্পতিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে, তার মৃত্যুর প্রতিবাদে বাঙালিরা দীঘিনালায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এই মিছিল চলাকালীন সময়ে পাহাড়িরা মিছিলে বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে পাহাড়িদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে পাহাড়িরা নিরাপত্তার জন্য তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পাহাড়ের গহীনে পালিয়ে যান।

খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রিপল বাপ্পি চাকমা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে আহত অবস্থায় ১৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতদের মধ্যে তিনজন মারা যান। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৯ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে বলে তিনি জানান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বাঙালিদের বিক্ষোভ মিছিলের সময় পাহাড়িদের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপরই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে এবং গোলাগুলি শুরু হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি, অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন, যারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিহত ও আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই পাহাড়ি সম্প্রদায়ের সদস্য।

এই সংঘর্ষের পর খাগড়াছড়ি শহরের বিভিন্ন এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপত্তার জন্য অনেক বাসিন্দা তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ইন্টারনেট সেবা সীমিত করে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মোতায়েন করে।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগ করে পরিস্থিতি শান্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পুলিশ সুপারসহ ঘটনাস্থলে যাচ্ছি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি।’

দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ জানান, দীঘিনালায় সংঘর্ষের সময় ১০২টি দোকান পুড়ে গেছে, যার মধ্যে চাকমা সম্প্রদায়ের ৭৮টি এবং বাঙালি সম্প্রদায়ের ২৪টি দোকান রয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে আরও চারটি দোকান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে কাজ করছে। বর্তমানে পরিস্থিতি থমথমে, তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় বাসিন্দারা শঙ্কিত এবং আতঙ্কিত অবস্থায় আছেন। পরিস্থিতি পুনরায় স্বাভাবিক করতে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সূত্র: প্রথম আলো

তারিখ ২০.০৯.২০২৪