ঢাকা, ৪ সেপ্টেম্বর: ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। মঙ্গলবার রাতে ঢাকার গুলশান এলাকা থেকে তাঁকে আটক করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে সোনা ও হীরা চোরাচালান, প্রতারণা, জালিয়াতি, এবং মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। এর পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাও রয়েছে, যার ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে অভিযোগের প্রমাণ নিয়ে কিছুটা সন্দেহও উত্থাপন করা হচ্ছে। সিআইডি ইতিমধ্যে এই ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে এবং দিলীপ কুমার আগরওয়ালার সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান চলছে।
ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে র্যাব আটক করেছে। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখা থেকে জানানো হয়েছে।
তাঁর বিরুদ্ধে সোনা ও হীরা চোরাচালান, অর্থ পাচার, প্রতারণা এবং জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বিভিন্ন জায়গায় নামমাত্র শোরুমের মাধ্যমে উন্নতমানের কাচের টুকরাকে ডায়মন্ড হিসেবে বিক্রি করেছেন। আরও অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি দুবাই ও সিঙ্গাপুরে সোনা চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন এবং ভারতের কলকাতায় তিনটি জুয়েলারি দোকান ও ১১টি বাড়ি, মালয়েশিয়া, দুবাই ও কানাডায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
সিআইডি আরও জানিয়েছে, দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে অবৈধভাবে একটি ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার চেষ্টা করেছেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে মানি লন্ডারিং আইনে তাঁর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
তাছাড়া, সম্প্রতি রাজধানীর বাড্ডা থানায় মো. শাহাদাত হোসেন খান বাদী হয়ে তাঁর নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি গত ২৩ আগস্ট রুজু করা হয় এবং তিনি এই মামলায় ২০ নম্বর আসামি হিসেবে অভিযুক্ত হয়েছেন। এই মামলার ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
যদিও এসব অভিযোগের প্রমাণ নিয়ে কিছুটা সন্দেহ রয়েছে, তবুও তদন্ত চলমান রয়েছে। তাঁর গ্রেপ্তারের পর, অনেকেই অভিযোগের ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
কে এই দিলীপ কুমার আগরওয়ালা:
দিলীপ কুমার আগরওয়ালা চুয়াডাঙ্গার এক ব্যবসায়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা স্থানীয়ভাবে ব্যবসা করতেন এবং দিলীপও প্রথমদিকে কনস্ট্রাকশন ব্যবসায় নিযুক্ত ছিলেন। ২০০০ সালে দিলীপ ঢাকায় আসেন, ডায়মন্ডের ব্যবসা শুরু করার জন্য। একজন বন্ধুর অনুপ্রেরণায় ডায়মন্ডের বাজারে প্রবেশ করেন, যদিও সে সময় বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ডায়মন্ডের প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না। প্রথমে ব্যাংকের এলসি করাতে অনেক সময় এবং কষ্ট হলেও দিলীপ ধীরে ধীরে তার ব্যবসা গড়ে তোলেন।
২০০৫ সালে দিলীপ তার প্রতিষ্ঠান “ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড” প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যবসার শুরুতে তিনি দেশের বিভিন্ন দোকানে হোলসেলে ডায়মন্ড সরবরাহ করতেন এবং ক্রেতাদের চাহিদা নিয়ে গবেষণা করতেন। তারপর, দলগত প্রচেষ্টায় ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের শোরুম স্থাপন করেন এবং বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠানটির ১৯টি আউটলেট রয়েছে।
দিলীপ কুমার আগরওয়ালা এফবিসিসিআই এর পরিচালক হিসেবে ২০১৫-২০১৭ এবং ২০১৭-২০১৯ মেয়াদে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া, তিনি বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন, যেখানে তিনি স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তার লক্ষ্য ছিল ডায়মন্ড জুয়েলারিকে মধ্যবিত্ত মানুষের নাগালে নিয়ে আসা।
দিলীপের আরেকটি বড় স্বপ্ন হল গোল্ড ব্যাংকিং চালু করা, যেখানে মানুষ তাদের সোনা জমা রেখে তার বিনিময়ে ঋণ পেতে পারে। তিনি এফবিসিসিআই এর পরিচালক হিসেবে কাজ করার সময়ও তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করেন।
তিনি বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগেও জড়িত, যেমন তার মা ‘তারা দেবী’র নামে একটি ফাউন্ডেশন স্থাপন করা এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ওল্ডকেয়ার হোম স্থাপনের পরিকল্পনা।
সূত্র: প্রথম আলো এবং চ্যানেল আই অনলাইন
তারিখ ০৪.০৯.২০২৪