উত্তরায় ১৩ নম্বর সেক্টরে দূর্গাপূজার আয়োজন, সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় নতুন স্থান নির্ধারণ

উত্তরায় ১৩ নম্বর সেক্টরে দূর্গাপূজার আয়োজন, সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় নতুন স্থান নির্ধারণ

ঢাকা, ২৬ সেপ্টেম্বর: ঢাকার উত্তরা এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজা এ বছর ১৩ নম্বর সেক্টরের খেলার মাঠের একাংশে অনুষ্ঠিত হবে। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় এবং স্থানীয় জনগণের মতামতের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের মাঠে পূজার আয়োজনের বিরোধিতা করায় এবং নতুন স্থান নির্ধারণের জন্য এলাকাবাসী মানববন্ধন করলে, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আলোচনার মাধ্যমে নতুন স্থান চূড়ান্ত করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিয়াবাড়ি আর্মি ক্যাম্পের মেজর খন্দকার জাহিদুল হক।

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দূর্গাপূজার আয়োজন নিয়ে সম্প্রতি সৃষ্ট জটিলতার অবসান ঘটেছে। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে এ বছর উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের খেলার মাঠের একাংশে পূজার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উত্তরা দিয়াবাড়ি আর্মি ক্যাম্পের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। উত্তরা দিয়াবাড়ি আর্মি ক্যাম্পের কর্মকর্তা মেজর খন্দকার জাহিদুল হক সোমবার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

গত কয়েক বছর ধরে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের খেলার মাঠে দূর্গাপূজার আয়োজন করা হতো। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা মাঠটি শিশুদের খেলার জন্য ব্যবহারের দাবি জানিয়ে পূজা আয়োজন অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য মানববন্ধন করেন। এলাকাবাসীর এই দাবির প্রেক্ষিতে উত্তরা দিয়াবাড়ি আর্মি ক্যাম্পের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্থানীয় সনাতন ধর্মালম্বী নেতা ও সেক্টর কল্যাণ সমিতির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টর ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফিরোজ জামান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. সালাউদ্দিন ভূঁইয়া, সেক্টরবাসীর প্রতিনিধি মাহমুদ নাছের, ফরিদ উদ্দিন, এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন নিত্য গোপাল, কমল কান্তি। এছাড়াও সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সাংবাদিকরাও উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি উত্তরা পশ্চিম শাখার সভাপতি নিত্য গোপাল জানান, “১১ নম্বর সেক্টরের এলাকাবাসীর আপত্তির কারণে এ বছর প্রাথমিকভাবে আমাদের ১৩ নম্বর সেক্টরে পূজার আয়োজন করতে বলা হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা সেনাবাহিনীর সহায়তায় পূজার স্থান নির্ধারণের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা লিখিত অনুমতি পেলেই পূজার প্রস্তুতি শুরু করব। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আমরা এ বছর পূজার আয়োজন যথাযথভাবে সম্পন্ন করার চেষ্টা করব।”

উত্তরা দিয়াবাড়ি ক্যাম্পের মেজর খন্দকার জাহিদুল হক সাংবাদিকদের জানান, “স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের যাতে নির্বিঘ্নে পূজার আয়োজন করতে পারে, সেজন্য আমরা এলাকাবাসীর মতামতের ভিত্তিতে ১৩ নম্বর সেক্টরের খেলার মাঠের একটি অংশ নির্ধারণ করেছি। আশা করি, তাঁরা শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে তাঁদের ধর্মীয় উৎসব সম্পন্ন করতে পারবেন।”

অপরদিকে, পূজা কমিটির সহ-সভাপতি সন্দীপ কুমার রুদ্র বলেন, “লিখিত অনুমতি পাওয়ার পর আমরা কাল থেকেই কাজ শুরু করব। সেনাবাহিনীর এমন সহযোগিতায় আমরা অত্যন্ত খুশি। আমাদের আশা, এ বছর ১৩ নম্বর সেক্টরের মাঠে শান্তিপূর্ণভাবে পূজার আয়োজন করতে পারব।”

গত মাসে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের কিছু বাসিন্দা পূজা বন্ধের দাবিতে মিছিল করেন। বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে, সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও বাসিন্দাদের নিয়ে বৈঠকে বসা হয় এবং সর্বসম্মতিতে ১৩ নম্বর সেক্টরের মাঠে পূজার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তবে এখনো আনুষ্ঠানিক অনুমতি না পাওয়ায় পূজা কমিটি কিছুটা দুশ্চিন্তায় রয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, যদি চূড়ান্ত অনুমতি না মেলে, তবে পূজার প্রস্তুতি যথাসময়ে শুরু করা সম্ভব হবে না। তাঁরা দ্রুত প্রশাসনের কাছে লিখিত অনুমতি প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন।

উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরটি তুলনামূলক নতুন এলাকা হওয়ায় সেখানে পূজার আয়োজন নিয়ে কিছুটা শঙ্কা আছে। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও আশা, এ বছর ১৩ নম্বর সেক্টরের মাঠে সুষ্ঠুভাবে দূর্গাপূজার আয়োজন হবে এবং উত্তরা এলাকার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকবে।

সূত্র: সকালের সময়

তারিখ ২৬.০৯.২০২৪