কানাডা, ২৪ সেপ্টেম্বর: বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপর হামলা ও নির্যাতন বন্ধ এবং তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে কানাডার বিভিন্ন শহরে বসবাসরত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা অটোয়ার পার্লামেন্ট ভবনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। এই সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন বন্ধ, উপাসনালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং আসন্ন দুর্গাপূজার শান্তিপূর্ণ উদযাপন নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। সমাবেশে কানাডার সরকার ও বিরোধীদলের সংসদ সদস্যরাও সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন। আন্তর্জাতিক মহলকে এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতন বন্ধ এবং তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে কানাডার বিভিন্ন শহরে বসবাসরত বাংলাদেশি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্যরা অটোয়ার পার্লামেন্ট ভবনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। টরন্টো, মন্ট্রিয়ল, ক্যালগেরি এবং অটোয়া থেকে আসা শতাধিক মানুষ ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন নিয়ে সমবেত হন এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাঁদের দাবি তুলে ধরেন।
সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা তাঁদের ব্যানার ও পোস্টারের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং আসন্ন দুর্গাপূজার সময় কোনো ধরনের হামলা বা সহিংসতা এড়াতে উপাসনালয়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানান। তাঁরা বলেন, “আমাদের দাবি, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করা হোক এবং তাঁদের উপর যে আক্রমণ চলছে, তা বন্ধ করা হোক।”
অটোয়ার পার্লামেন্ট ভবনের সামনে আয়োজিত এই সমাবেশে কানাডার সরকার ও বিরোধীদলের সংসদ সদস্যরাও সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ-কানাডা পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের চেয়ার ব্র্যাড রেডিকপ এমপি, সালমা জাহিদ এমপি, চন্দ্রা আরিয়া এমপি, টিম উপপাল এমপি, শুভালয় মজুমদার এমপি, জসরাজ সিং হাল্লান এমপি, অর্পণ খান্না এমপি প্রমুখ।
সংসদ সদস্যরা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, “ধর্মীয় স্বাধীনতা একটি মৌলিক অধিকার এবং তা নিশ্চিত করা প্রতিটি দেশের দায়িত্ব। সারা বিশ্বের সব ধর্মের মানুষই নির্ভয়ে তাঁদের ধর্ম পালনের অধিকার পেতে চায়। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে এবং তাঁদের উপর চলমান নির্যাতন বন্ধ করবে।”
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, “বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও আদিবাসীরা আজ ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তাঁদের উপর হামলার ঘটনা বারবার ঘটছে। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, তাঁরা যেন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেন।”
এছাড়াও, সমাবেশে উপস্থিত বাংলাদেশি নেতৃবৃন্দ জানান, “বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির ফলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় ও বাড়িঘরে আক্রমণ বেড়ে গেছে। এমনকি দুর্গাপূজার মতো বড় ধর্মীয় উৎসবের সময়ও তাঁদের আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে। আমরা চাই, আসন্ন দুর্গাপূজায় যেন কোনো ধরনের সহিংসতা না ঘটে এবং সবাই যেন শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন করতে পারে।”
সমাবেশে সংখ্যালঘু অধিকার রক্ষার দাবিতে বক্তারা কানাডা সরকারের কাছে বাংলাদেশ সরকারের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করার জন্য অনুরোধ জানান। তাঁরা বলেন, “বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা ক্রমাগতভাবে নিপীড়নের শিকার হচ্ছে এবং তাদের মৌলিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে আমরা আন্তর্জাতিক মহল এবং কানাডার সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করি।”
বাংলাদেশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার আন্দোলনকারীরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক সমর্থন ও চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব। তাঁরা আরও জানান, “আমরা আশা করছি, কানাডা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় আমাদের পাশে থাকবে এবং তাদের উপর নির্যাতন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।”
সূত্র: চ্যানেল আই অনলাইন
তারিখ ২৬.০৯.২০২৪