সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার হয় না

সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার হয় না

বাংলাদেশে যেকোনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার পর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও রাজনীতি হয়, কিন্তু বিচার হয় না৷ ফলে থামছে না নির্যাতনের ঘটনাও৷ অভিযোগ, নেপথ্যে ক্ষমতাসীনরা জড়িত থাকায় তাদেরকে আইনের আওতায় আনা যায় না৷ সুনামগঞ্জে হিন্দু পল্লীতে হামলা হয় মাইকে ঘোষণা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে৷ সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও হিন্দু পল্লীতে হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত পুলিশ হামলায় এখন পর্যন্ত ২৩ জনকে আটক করা হয়েছে৷ সবশেষ গ্রেপ্তার হয়েছেন ‘মূল আসামি’ শহীদুল ইসলাম স্বাধীন ওরফে স্বাধীন মেম্বার৷

সুনামগঞ্জের শাল্লা

স্থানীয় গণমাধ্যমে শহীদুল ইসলাম স্বাধীনকে যুবলীগ সভাপতি বলা হলেও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, তিনি যুবলীগের কেউ নন৷

এদিকে হামলার ঘটনায় জড়িতদের ধরতে এখন তৎপর হলেও ঘটনার ১২ ঘণ্টা আগে খবর পেয়েও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ৷ এই ঘটনার একদিন আগে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগে ঝুমন দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ অন্যদিকে আটক স্বাধীন মেম্বার হামলার পর শাল্লা থানার ওসির সাথেই ছিলেন বলে গ্রেপ্তারের আগে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন৷

রামু, কক্সবাজার

২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরে রামুতে বৌদ্ধ পল্লীতে হামলার ঘটনা ঘটে৷ প্রায় নয় বছর পার হলেও কোন বিচার এখনও হয়নি৷ এই ঘটনায় মোট ১৯টি মামলা হয়েছিল৷ একটি মামলার চার্জশিট হলেও বিচার শুরু হয়নি৷ যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো তারা সবাই জামিনে আছেন৷ আর যে উত্তম বড়ুয়ার নামে ফেসবুক পোস্টের অজুহাতে রামু, উখিয়া এবং টেকনাফে তাণ্ডব চালানো হয়েছিল তিনি জামিন পেলেও এখন নিখোঁজ রয়েছেন৷ যদিও তদন্তে তার ফেসবুক পোস্টের কোনো প্রমাণ মেলেনি৷

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর

২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু বসতিতে হামলার তদন্ত প্রায় পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি৷ ওই সময় যাদের আটক করা হয়েছিল তারাও জামিনে মুক্ত৷ অন্যদিকে লেখাপড়া না জানা যে রসরাজের ফেসবুক পোস্টের ধর্মীয় অবমাননার কথা তুলে হামলা হয়েছিল তাকেই উল্টো দীর্ঘদিন জেলে থাকতে হয়েছে৷ এখন জামিন পেলেও আতঙ্কে তার দিন কাটছে৷

এর শেষ কোথায়?

গত বছরের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর এই সাত মাসে ৬০টি পরিবারকে গ্রামছাড়া করা হয়েছে৷ মন্দিরে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের ২৩টি ঘটনা ঘটেছে৷ ওই সময়ে হত্যার শিকার হয়েছেন ১৭ জন সংখ্যালঘু৷ হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে ১১ জনকে৷ ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩০ জন৷ অপহরণের শিকার হয়েছেন ২৩ জন৷

২৭টি প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে৷ বসতভিটা, জমিজমা, শ্মশান থেকে উচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে ২৬টি৷ সাতজনকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে, ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে চারজনকে৷ বসত-ভিটা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে ৮৮টি৷ হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন ২৪৭ জন৷

সংবাদ সূত্র: ডয়চে ভেলে

তারিখ 19.11.2021