কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলায় পূজামণ্ডপে হামলা ভাংচুরের মধ্যে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, গত নয় বছরে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর ৩ হাজার ৬৭৯টি হামলা হয়েছে। বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থাটি প্রতিবছরই মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি প্রতিবেদন দেয়। ২০১৩ সাল থেকে হিন্দুসহ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর হামলার ঘটনাগুলোও তারা প্রতিবেদনে আলাদাভাবে দিয়ে আসছে।
আসকের প্রতিবেদন
আসকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আট বছর নয় মাসে হিন্দুদের উপর ৩ হাজার ৬৭৯টি হামলা হয়েছে।
এর মধ্যে ১ হাজার ৫৫৯টি বাড়িঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এই সময়ে হিন্দুদের ৪৪২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে।
প্রতিমা, পূজামণ্ডপ, মন্দিরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৬৭৮টি।
এসব হামলায় আহত হয়েছে ৮৬২ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। নিহত হয়েছে ১১ জন।
এর বাইরেও ২০১৪ সালে দুজন হিন্দু নারী ধর্ষণের শিকার হন। শ্লীলতাহানি করা হয় আরও চারজনের।
এছাড়া ২০১৬, ২০১৭ ও ২০২০ সালে ১০টি হিন্দু পরিবারকে জমি ও বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে দখলের অভিযোগ ওঠে।
আসকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত নয় বছরে হিন্দুদের উপর সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে ২০১৪ সালে।
ওই বছরের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন হয়েছিল। এর পরবর্তী সহিংসতার শিকার হন হিন্দুরা। ৭৬১টি হিন্দু বাড়ি-ঘর, ১৯৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ২৪৭টি মন্দির-মণ্ডপে হামলা হয় ওই বছর। তখন নিহত হন একজন।
সবচেয়ে কম হামলা হয়েছে ২০২০ সালে। মহামারীর মধ্যে গত বছর ১১টি বাড়ি ও ৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার তথ্য রয়েছে আসকের প্রতিবেদনে। তবে মন্দিরে হামলা হয়েছে ৬৭টি।
তথ্য ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হিন্দু খুন হয়েছে ২০১৬ সালে, মোট সাতজন। এসব হত্যাকাণ্ডের অনেকগুলো ‘জঙ্গি হামলা’ বলে পরে জানিয়েছে পুলিশ।
রাজনৈতিক দোষারোপ
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনায় বরাবরই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ চলে।
এবারও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি এবং তাদের জোটসঙ্গী দলগুলোকে দায়ী করেছে হিন্দুদের উপর হামলার জন্য। আবার বিএনপি নেতারা দাবি করছেন, ক্ষমতাসীনরাই এসব ঘটিয়েছে।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হিন্দুদের উপর বারবার হামলা চলছে। একটা জিনিস স্পষ্ট, এটার নেপথ্যে রাজনীতি রয়েছে।
“যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তাদের কিছু লোকজন এসবে যুক্ত থাকেন। সরকারদলীয় মাঝারি গোছের নেতাদের সংশ্লিষ্টতা রামুতে দেখেছি, লামায় দেখেছি। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীনরা নিজেরা লাভবান হওয়ার একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়।”
পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক দোষারোপ চললেও মূল অপরাধটি আড়াল হয়ে যায় বলে সঙ্কটের সমাধানও আসছে না বলে মনে করেন নূর খান।
“যখন যারা ক্ষমতায় থাকে, তখনই তারা বিরোধী দলের দিকে আঙুল তোলেন। যার ফলাফল এসবের কোনো বিচার হয় না। গত ১০/১৫ বছরের ঘটনা দেখলে দেখা যাবে, কোনোটারই বিচার হয়নি। এমন কোনো দৃষ্টান্ত তৈরি হয়নি, যাতে অপরাধীরা ভাবতে পারে যে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে পার পাওয়া যাবে না। যার ফলে ঘটনা ঘটেই চলেছে, মাত্রাও বাড়ছে।”
সংবাদ সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
তারিখ ১৮-১০-২০২১