যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় পুলিশের পরিচয় দিয়ে দুই বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার ভোরে বরভাগ গ্রামে পশুপতি ও বিশ্বনাথ দেবনাথের বাড়িতে ঢুকে ডাকাত দল টাকা, মোবাইল ফোন এবং স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। তারা পুলিশের পোশাক পরে এসেছিল, যা এই ডাকাতির নাটকীয়তা বাড়িয়ে তুলেছে।
যশোর, ০৪ জানুয়ারি, ২০২৫: যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় আজ শনিবার ভোরে দুই বাড়িতে পুলিশের পরিচয় দিয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার শিকার হন বরভাগ গ্রামের প্রবীণ পশুপতি দেবনাথ (৭০) এবং তাঁর ভাই বিশ্বনাথ দেবনাথ (৫২)। ডাকাত দল তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে টাকা, মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায়।
বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিম প্রথম আলোকে বলেন, “খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” ঘটনার বিস্তারিত জানতে গেলে বোঝা যায়, ভোর সোয়া চারটার দিকে ছয়টি মোটরসাইকেলে করে ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী ১২ থেকে ১৪ জন ব্যক্তি এই দুই ভাইয়ের বাড়িতে এসেছিল। তাদের কয়েকজন ডিবি পুলিশের মতো পোশাক পরা ছিল, অন্যদের গায়ে পুলিশের ‘নেভি-ব্লু’ জ্যাকেটের মতো দেখতে জ্যাকেট ছিল, তবে পোশাকের গায়ে কিছু লেখা ছিল না। সবাই সাধারণ প্যান্ট পরে এসেছিল। একজনের কাছে একটি পিস্তল এবং ওয়াকিটকি দেখা গিয়েছিল।
ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা বলেন, এই ব্যক্তিরা প্রথমে বিশ্বনাথ দেবনাথের ঘরের সামনে গিয়ে ডাকতে শুরু করে। তারা বলেন যে, “চট্টগ্রাম থেকে কিছু লোক অবৈধ অস্ত্র নিয়ে বাড়িতে আছে” এবং তাই থানা থেকে তল্লাশি করতে এসেছেন। নিজেদের পুলিশ বলে পরিচয় দিয়ে, দরজা না খুললে দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকবেন বলে জানান। অবশেষে দরজা খুলে দিলে তারা ঘরে ঢুকে পুলিশের মতো করে বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি শুরু করে।
এ সময় তাদের কয়েকজন পাশের পশুপতি দেবনাথের বাড়িতে ঢোকেন। ডাকাত দল এক পর্যায়ে পশুপতি দেবনাথ এবং বিশ্বনাথ দেবনাথের ছেলে ব্রজেশ্বর দেবনাথকে (২৫) প্লাস্টিকের তালা দিয়ে পেছন থেকে দুই হাত আটকে রাখে। তারপরে বাড়িতে থাকা বিশ্বনাথ দেবনাথ, তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে অন্য একটি কক্ষে নিয়ে বসিয়ে রাখে এবং ঘরের আলমারির চাবি নিয়ে নেয়। তারা দুই বাড়ির সব কক্ষের আসবাব ও বাড়ির পারিবারিক মন্দিরে থাকা বিভিন্ন পূজার উপকরণ ওলট-পালট করতে থাকে।
পশুপতি দেবনাথের ছেলে দেবপ্রসাদ দেবনাথ বলেন, “প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে ডাকাতি চলে। ডাকাত দল আমার কাকার ঘর থেকে ৯০ হাজার টাকা, আড়াই ভরি স্বর্ণালংকার, একটি আইফোন ও একটি মুঠোফোন এবং আমার বাবার ঘর থেকে পাঁচ ভরি স্বর্ণালংকার, পাঁচ হাজার টাকা এবং আমার মোটরসাইকেলের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও মোটরসাইকেলের কাগজপত্র নিয়ে যায়।” ডাকাতি শেষে তারা মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, “আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে আমরা থানায় অভিযোগ করব।”
এই ঘটনা অঞ্চলে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে, বিশেষ করে যেহেতু ডাকাতরা পুলিশের পরিচয় দিয়ে কাজ করেছিল। এটি স্থানীয় জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার বোধ সৃষ্টি করেছে এবং পুলিশের প্রতি বিশ্বাসকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে। স্থানীয় পুলিশ এখন এই ঘটনার তদন্তে ব্যস্ত এবং ভুক্তভোগীদের মালামাল ফিরে পাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।