চিন্ময় প্রভুর জামিন শুনানি আজ, বাংলাদেশের নজর আদালতের দিকে

চিন্ময় প্রভুর জামিন শুনানি আজ, বাংলাদেশের নজর আদালতের দিকে

গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হন ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাঁর জামিন আবেদন বারবার খারিজ হয়েছে। ৫১ আইনজীবী প্রাণভয়ে শুনানিতে অংশ নেননি। প্রবীণ আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ ভারতে চিকিৎসাধীন। আজ তিন হিন্দু আইনজীবী আদালতে সওয়াল করবেন। ভারতের উদ্বেগ ও কূটনৈতিক চাপের মুখে ইউনুস সরকার নমনীয় হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সেনাপ্রধানও ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার বার্তা দিয়েছেন। আজকের শুনানি বাংলাদেশের রাজনীতি ও হিন্দু সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

ঢাকা, ০২ জানুয়ারি, ২০২৫: গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অভিযোগে চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করা হয় তাঁকে, তবে জামিনের আবেদন একাধিকবার খারিজ হয়ে যায়। এর পর থেকে বাংলাদেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। হিন্দু সম্প্রদায়ের একাংশ এবং বিভিন্ন সংগঠন তাঁর মুক্তির দাবি জানায়।

চিন্ময় প্রভুর গ্রেপ্তারের পর আদালতের বাইরে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী আইনজীবীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে একজন আইনজীবী গুরুতর আহত হয়ে আইসিইউ-তে ভর্তি হন। হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবি, এই ঘটনা চিন্ময় প্রভুর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সংখ্যালঘুদের ভয় দেখানোর চেষ্টা।

গত ৩ ডিসেম্বর তাঁর জামিনের শুনানি ছিল। কিন্তু ‘প্রাণভয়ে’ ৫১ জন আইনজীবী আদালতে উপস্থিত হননি। তাঁদের দাবি, চিন্ময় প্রভুর হয়ে সওয়াল করলে তাঁদের জীবনও ঝুঁকির মুখে পড়বে। এর ফলে শুনানি পিছিয়ে যায় এবং নতুন তারিখ ধার্য করা হয় ২ জানুয়ারি।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট অভিযোগ করেছে, চিন্ময় প্রভুর মুক্তি আটকাতে অন্তর্বর্তীকালীন ইউনুস সরকারের পরিকল্পনায় ৭০ জন হিন্দু সন্ন্যাসীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মূল লক্ষ্য, যাতে কেউ চিন্ময় প্রভুর পক্ষে আদালতে দাঁড়াতে সাহস না দেখান।

প্রবীণ আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ সাহসিকতার সঙ্গে চিন্ময় প্রভুর পক্ষে দাঁড়ান, তবে চট্টগ্রাম আদালতে শারীরিক হেনস্থার শিকার হন তিনি। কয়েক সপ্তাহ পর তিনি ভারতে চিকিৎসার জন্য আসেন এবং এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। রবীন্দ্র ঘোষ আজকের শুনানিতে উপস্থিত হতে পারবেন না, তবে তাঁর অনুপস্থিতিতেও তিনজন হিন্দু আইনজীবী চিন্ময় প্রভুর হয়ে আদালতে লড়াই করবেন।

ভারত এই ঘটনার প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। হিন্দু সন্ন্যাসীর গ্রেপ্তারের ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে কূটনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে। ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরি সম্প্রতি ঢাকা সফর করেছেন এবং বিষয়টি আলোচনায় আসে।

গতকাল বাংলাদেশের সেনাপ্রধান এক বিবৃতিতে বলেন, আগামী দিনে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা ইউনুসও প্রয়াত ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে শ্রদ্ধা জানাতে ভারতীয় দূতাবাসে যান এবং রাষ্ট্রদূত প্রণয় কুমার ভার্মার সঙ্গে বৈঠক করেন।

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দু নির্যাতন, উচ্চ মূল্যবৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ইউনুস সরকারের উপর চাপ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে আজকের শুনানিতে নমনীয় হতে পারে সরকার।

বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় এবং আন্তর্জাতিক মহল আজকের শুনানির দিকে বিশেষভাবে নজর রাখছে। আদালতের রায়ের উপর নির্ভর করবে চিন্ময় প্রভুর ভবিষ্যৎ এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি সরকারের অবস্থান।

তারিখ: ০২.০১.২০২৫