মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী আদিত্যের মহাল শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর সেবা আশ্রমে বুধবার (১ জানুয়ারি ২০২৫) সকালে হামলা হয়। হামলাকারীদের আক্রমণে আশ্রমের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সেবায়েতদের শারীরিক আক্রমণ করা হয়। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে, মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তারের জন্য প্রচেষ্টা চলছে।
মৌলভীবাজার, ০১ জানুয়ারি, ২০২৫: মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী আদিত্যের মহাল শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর সেবা আশ্রমে বুধবার সকালে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। সকাল ৯টার দিকে একদল অজ্ঞাত ব্যক্তি আশ্রমে প্রবেশ করে ভাঙচুর এবং লুটপাট করে। এই হামলায় আশ্রমের ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী, হামলাকারীরা আশ্রমের ভেতরে ঢুকে প্রার্থনার স্থান, মূর্তি, এবং অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী ভাঙচুর করে। তারা সেবায়েতদেরও মারধর করে, যার ফলে আশ্রমের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সেবায়েতরা আত্মরক্ষায় নিরস্ত হয় এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন।
ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ব্যাপারটি সম্পর্কে জানিয়েছেন যে, আশ্রমের কর্তৃপক্ষের ওপরে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। পুলিশ তদন্তের জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে যোগাযোগ করছে, ক্যামেরা ফুটেজ খুঁজছে এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে ব্যস্ত।
স্থানীয় জনগণ এই ঘটনায় শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং শাস্তির দাবি জানিয়েছে। বড়লেখা উপজেলার বাসিন্দা জানিয়েছেন যে এই ধরনের ঘটনা তাদের নিরাপত্তার অনুভূতিকে ক্ষুণ্ণ করে এবং আশ্রমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন। কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এই ঘটনা শুধু আশ্রমকে নয়, আমাদের সম্প্রদায়কেও আঘাত করেছে। আমরা আশা করি যে প্রশাসন দ্রুত বিচার করবে এবং দোষীদের শাস্তি দেবে।”
ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এই ঘটনাকে নিন্দা করেছেন এবং আশ্রমের পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, “এই ধরনের হামলা আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের মূলকে আঘাত করে। আমরা আশা করি যে জোরদার তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি মিলবে।” আশ্রমের সেবায়েতরা প্রকাশ করেছেন যে এই হামলা তাদের নৈতিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, “আমরা চাই যে প্রশাসন আমাদের সাহায্য করে এবং এই ধরনের ঘটনা আবার ঘটতে না দেয়।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ আশ্রমের পুনর্গঠনের জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন। তারা আশ্রমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়াতে এবং সেবায়েতদের পুনর্বাসনের জন্য প্রোগ্রাম তৈরি করতে ব্যস্ত।
যেহেতু গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরে হামলা এবং লুটপাটের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই এই ঘটনা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশ্নকে আরো স্পষ্ট করে তুলেছে। স্থানীয় জনগণ এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় আশা করা হচ্ছে যে দ্রুত বিচার হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন সম্ভব হবে। এই ঘটনা জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তাকেও উন্মোচন করেছে, যেখানে সকলের সুরক্ষা এবং শান্তি বজায় রাখা প্রয়োজন।