নাটোর, ময়মনসিংহ ও দিনাজপুরের বিভিন্ন মন্দিরে হামলা, বিগ্রহ ভাঙচুর এবং তরুণ চন্দ্র দাস হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। শনিবার রাতে পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই নিন্দা জানানো হয়। পরিষদ দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেছে, এসব ঘটনা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। তারা সরকারের বিশেষ নজরদারির আহ্বান জানিয়েছে।
ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪: বাংলাদেশের নাটোর, ময়মনসিংহ ও দিনাজপুরে সম্প্রতি মন্দিরে হামলা, বিগ্রহ ভাঙচুর এবং নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন কর্মী হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। নাটোরের বড় হরিশপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহাশ্মশান মন্দিরের দেখভালকারী তরুণ চন্দ্র দাসকে হত্যা এবং মন্দিরে ডাকাতি ও লুটপাটের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।
একই সঙ্গে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের বন্দেরপাড়ার সাকুয়া ইউনিয়নের রাধাগোবিন্দ মন্দির এবং বিলাসপুর পলাশ কান্দা কালী মন্দিরে হামলা চালিয়ে বিগ্রহ ভাঙচুরের ঘটনা এবং দিনাজপুরের একটি মন্দিরে হামলার ঘটনা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাতে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই নিন্দা জানানো হয়। ঐক্য পরিষদ বলেছে, এসব ঘটনার জন্য দায়ীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা জরুরি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এই ধরনের সহিংস ঘটনা শুধুমাত্র দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও ধর্মীয় অধিকার ক্ষুণ্ন করছে না, বরং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট করছে। এটি রোধে সরকারকে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে।”
প্রসঙ্গত, নাটোরের কাশিমপুর মহাশ্মশান মন্দিরে পাহারাদার হিসেবে নিয়োজিত তরুণ চন্দ্র দাস দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছিলেন। মন্দিরের নিরাপত্তার জন্য তিনি রাতে সেখানে থাকতেন। সম্প্রতি মন্দিরে ডাকাতির সময় দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ধরনের ঘটনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে এবং প্রশাসনের তৎপরতা প্রয়োজন। ঐক্য পরিষদ বলেছে, “যারা এই ধরনের নৃশংস কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় এই ঘটনা অব্যাহত থাকবে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা আরও ঝুঁকির মুখে পড়বে।”
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের সাকুয়া ইউনিয়নের রাধাগোবিন্দ মন্দিরে হামলা চালিয়ে বিগ্রহ ভাঙচুরের ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় ভীত হয়ে পড়েছে। একইভাবে বিলাসপুর পলাশ কান্দা কালী মন্দিরেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
দিনাজপুরের ঘটনায় স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে, দুর্বৃত্তরা মন্দিরে প্রবেশ করে বিগ্রহ ভাঙচুর করে এবং কিছু মূল্যবান সামগ্রী লুট করে। এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন তদন্ত শুরু করলেও এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “সরকারের উচিত এসব ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।”
এদিকে, স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, তারা প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করছে এবং অপরাধীদের শনাক্তের জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “আমরা খুব শিগগিরই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে পারব এবং আইনের আওতায় আনব।”
অন্যদিকে, হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা সরকারের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, “এ ধরনের ঘটনা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।”
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমরা আশা করি সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেবে এবং এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করবে।”
এই ঘটনার পর থেকে স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা মনে করেন, প্রশাসনের আরও কঠোর ভূমিকা প্রয়োজন।
বিজ্ঞপ্তিতে ঐক্য পরিষদ বলেছে, “আমরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করি এবং চাই দেশের সব ধর্মের মানুষ নিরাপদে বসবাস করুক। কিন্তু এই ধরনের ঘটনা যদি চলতে থাকে, তবে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হবে।”
বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন এই ঘটনার প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এবং তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যেন কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।