নাটোর মহাশ্মশানে চুরি, প্রহরীর হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার

নাটোর মহাশ্মশানে চুরি, প্রহরীর হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার

নাটোরের কাশিমপুর মহাশ্মশানের পাহারাদার তরুণ কুমার দাসের হাত-পা বাঁধা লাশ আজ শনিবার উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ ধারণা করছে, দুর্বৃত্তরা চুরির সময় বাধা দেওয়ায় তাকে হত্যা করেছে। নিহত তরুণ ২৫ বছর ধরে মহাশ্মশানের পাহারার দায়িত্বে ছিলেন। মহাশ্মশান কমিটির সাধারণ সম্পাদক জানান, মন্দিরের দানবাক্স ও ভান্ডারঘরের তালা ভাঙা অবস্থায় পাওয়া গেছে। নিহতের পরিবার এবং স্থানীয়রা দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে এবং তদন্ত শুরু করেছে।

নাটোর, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪: নাটোরের কাশিমপুর মহাশ্মশানের দীর্ঘদিনের পাহারাদার তরুণ কুমার দাসের (৬০) হাত-পা বাঁধা লাশ আজ শনিবার উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতের কোনো একসময় দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আজ সকালে মহাশ্মশানের অন্যান্য কর্মচারীরা তার লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন।

তরুণ কুমার দাস নাটোর পৌর এলাকার আলাইপুর মহল্লার বাসিন্দা এবং মৃত কালিপদ দাসের ছেলে। ২৫ বছর ধরে তিনি মহাশ্মশানের পাহারাদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। প্রতিদিনের মতো গতকালও তিনি রাতে শ্মশান পাহারা দেওয়ার জন্য ছিলেন। তবে আজ সকালে তার লাশ শ্মশানের ভোগঘরের বারান্দায় হাত ও পা বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়।

মহাশ্মশান কমিটির সাধারণ সম্পাদক সত্যনারায়ণ রায় জানান, সকালে মহাশ্মশানের অন্যান্য কর্মচারীরা তরুণ কুমারের লাশ দেখতে পান এবং দ্রুত তাকে খবর দেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি দেখেন, শ্মশান মন্দিরের দানবাক্স এবং ভান্ডারঘরের তালা ভাঙা ও গ্রিল কাটা। এটি দেখে ধারণা করা হচ্ছে, মন্দিরের মূল্যবান জিনিসপত্র চুরির উদ্দেশ্যে দুর্বৃত্তরা প্রবেশ করে এবং পাহারাদার তরুণ কুমার দাস তাদের দেখে ফেলায় তাকে হত্যা করা হয়।

তরুণ কুমারের ছোট ভাই প্রদীপ কুমার দাস জানান, তার ভাই দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে মহাশ্মশান পাহারা দিচ্ছেন। তিনি রাতে শ্মশানেই থাকতেন এবং সেখানেই খাওয়াদাওয়া করতেন। তার ভাইয়ের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন বলে জানান প্রদীপ।

তরুণ কুমারের ছেলে তপু দাস বলেন, তার বাবা একজন নিরীহ মানুষ ছিলেন। কোনো শত্রুতা ছিল না। এমন একটি ঘটনা তার পরিবারের জন্য দুঃসহ। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা কারো কোনো ক্ষতি করেননি। যারা তাকে হত্যা করেছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

নাটোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্মশানের ভান্ডারঘরের কিছু মালামাল লুটের আলামত পেয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, চুরির ঘটনা ঘটানোর সময় তরুণ কুমার দাস বাধা দিলে দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে। পুলিশের পক্ষ থেকে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে এবং ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ওসি মাহবুবুর রহমান আরও জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত নৃশংস এবং দোষীদের খুঁজে বের করতে পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। এলাকাবাসীর নিরাপত্তার বিষয়টিও আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি।’

এদিকে স্থানীয় এলাকাবাসী এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, তরুণ কুমার দাস দীর্ঘদিন ধরে সততার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেছেন এবং কারও সঙ্গে কোনো বিরোধ ছিল না। এলাকাবাসী পুলিশ প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, দ্রুত তদন্ত করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

এই হত্যাকাণ্ড নাটোরের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। তরুণ কুমার দাসের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার আত্মীয়স্বজন এবং এলাকাবাসী সবাই একত্রে দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শেষে দ্রুত দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত আলামত বিশ্লেষণ করে এবং নিহতের পরিবারের সদস্যদের বক্তব্যের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

নাটোরের কাশিমপুর মহাশ্মশান এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং স্থানীয় প্রশাসনও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তরুণ কুমার দাসের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই এলাকায় পুলিশি নজরদারি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন ওসি মাহবুবুর রহমান।

তারিখ: ২২.১২.২০২৪