বাংলাদেশি জঙ্গি মডিউল ধরা পড়ল, লক্ষ্য ছিল হিন্দু ও RSS নেতা।

বাংলাদেশি জঙ্গি মডিউল ধরা পড়ল, লক্ষ্য ছিল হিন্দু ও RSS নেতা।

অসম পুলিশের অভিযানে আট বাংলাদেশি জঙ্গিকে আটক করা হয়েছে, যারা আনসার-উল-বাংলা টিমের সদস্য। ধৃতরা পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলে স্লিপার সেল গড়ে তোলার কাজ করছিল। লক্ষ্য ছিল হিন্দু ও আরএসএস নেতাদের টার্গেট করা। তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও ধর্মীয় উগ্রবাদী নথি উদ্ধার হয়েছে। তদন্তকারীরা জানান, বাংলাদেশ থেকে সরাসরি পাঠানো হয়েছিল তাদের। মুর্শিদাবাদ থেকে ধৃত দুইজনের মধ্যে একজন পাম্প মেকানিক। ধৃতরা পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সন্ত্রাসী নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত।

মুর্শিদাবাদ, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪: বাংলাদেশ থেকে আসা জঙ্গি সংগঠন আনসার-উল-বাংলা টিম (ATB)-এর আট সদস্যকে আটক করেছে অসম পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে দুইজন পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে ঘাঁটি গেড়েছিল। কেরল থেকেও এই সংগঠনের বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি বলছে, এই জঙ্গি গোষ্ঠী ভারতে স্লিপার সেল তৈরি করছিল, এবং তাদের মূল লক্ষ্য ছিল হিন্দু ও RSS নেতাদের হত্যা করা।

অসম পুলিশের স্পেশাল ডিজিপি হরমীত সিং জানান, আটক হওয়া ব্যক্তিরা সরাসরি বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করে জঙ্গি কার্যকলাপ চালানোর পরিকল্পনা করছিল। ধৃত শাদ রদি বাংলাদেশি নাগরিক এবং গত নভেম্বরে তাকে ভারতে পাঠানো হয়েছিল। মুর্শিদাবাদ থেকে আটক হওয়া অন্য দুইজন, মিনারুল ও আব্বাস, দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গে লুকিয়ে ছিল। ৪৮ বছর বয়সী মিনারুল পেশায় একজন পাম্প মেকানিক ছিলেন।

তদন্তে উঠে এসেছে, ধৃতরা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত। গোপন এবং সন্দেহজনক অ্যাপের মাধ্যমে তাদের মধ্যে বার্তা বিনিময় হতো। পুলিশের হাতে বেশ কিছু বিকৃত ধর্মীয় বই, বাংলাদেশি পাসপোর্ট এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথি এসে পৌঁছেছে। এগুলি থেকে স্পষ্ট যে, তারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতবর্ষে স্লিপার সেল তৈরি করার পরিকল্পনা করছিল।

অসম পুলিশের তৎপরতায় তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, এই স্লিপার সেলগুলি যুব সমাজকে ব্রেনওয়াশ করে তাদের জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত করার চেষ্টা করছিল। বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র সংগ্রহ এবং হামলার পরিকল্পনাও ছিল। তবে অসম পুলিশের অভিযানে এই চক্রান্ত বানচাল হয়েছে।

এ বিষয়ে পুলিশ আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ধৃতদের কাছ থেকে যে সমস্ত তথ্য উদ্ধার হয়েছে, তার ভিত্তিতে আরও তদন্ত চলছে। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে যে, ফারাহ ইশাক নামের একজন বাংলাদেশ থেকে সরাসরি অপারেশনটি পরিচালনা করছিল। তার সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনের প্রধানের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।

এই ঘটনার পর ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি সীমান্ত এলাকায় সতর্কতা জারি করেছে এবং বাংলাদেশি নাগরিকদের চলাফেরার উপর কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ এবং অসমে পুলিশ প্রশাসন সীমান্তবর্তী গ্রামে বাড়তি নজরদারি চালাচ্ছে। মুর্শিদাবাদসহ একাধিক জেলায় অভিযান চালানো হচ্ছে।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ধৃতরা বিভিন্ন জায়গায় যুবকদের ধর্মীয় উগ্রবাদে উসকানি দিত এবং তাদের মগজ ধোলাই করে জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত করত। মূলত হিন্দু ও RSS নেতারা তাদের টার্গেট ছিল। ভারতীয় গোয়েন্দারা মনে করছেন, এটি বৃহত্তর জঙ্গি চক্রের অংশ এবং ভবিষ্যতে এমন আরও ঘটনা ঘটতে পারে। ফলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযানের সময় যে নথি উদ্ধার হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং দুই দেশের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদানও চলছে।

এই ঘটনায় দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি আরও বেশি সতর্ক হয়ে কাজ করছে। সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং জনসাধারণকেও সন্দেহজনক কার্যকলাপ সম্পর্কে প্রশাসনকে অবহিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তারিখ: ২২.১২.২০২৪