বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন, ভারত সরকারের দৃঢ় অবস্থানের দাবি তৃণমূলের

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন, ভারত সরকারের দৃঢ় অবস্থানের দাবি তৃণমূলের

তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের তীব্র নিন্দা করেছেন এবং ভারতের সংসদে একটি বিবৃতি প্রদানের দাবি করেছেন। সম্প্রতি বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রের ঢাকা সফরের আলোচনার স্বচ্ছতার দাবি তুলে তিনি বলেন, ভারত সরকারের উচিত দৃঢ়ভাবে এই হামলার নিন্দা করা। মিশ্র বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ গঠনের ওপর জোর দেন। ইসকন পুরোহিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার প্রসঙ্গেও ভারত গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর ধারাবাহিক আক্রমণ এবং মন্দির ভাঙচুর নিয়ে আলোচনা হয়।

নয়াদিল্লি, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪: তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর চলমান অত্যাচারের নিন্দা জানিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রের সাম্প্রতিক ঢাকা সফরের আলোচনার বিষয়ে স্বচ্ছতা থাকা উচিত এবং সংসদে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রদান করা আবশ্যক। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর ক্রমবর্ধমান হামলা, লুটপাট এবং ধর্মীয় স্থান ভাঙচুরের প্রেক্ষিতে ভারত সরকারের উচিত বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরা।

বিক্রম মিশ্রের ৯ ডিসেম্বরের ঢাকা সফর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের প্রথম যোগাযোগ। এটি কার্যত বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সরকার, শেখ হাসিনাকে অপসারণের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়। সফরকালে মিশ্র বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং সম্প্রদায়িক শান্তি প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন। বিশেষত, তিনি ইসকনের গুরুত্বপূর্ণ পুরোহিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বলেন, সংখ্যালঘু অধিকার রক্ষা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলেন, ভারত সরকারকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে এবং বাংলাদেশের সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে যাতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা বন্ধ হয়। তিনি দাবি করেন, বিদেশ সচিবের আলোচনা এবং সফর সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য সংসদে উন্মুক্ত করতে হবে।

এই সফরে মিশ্র বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নত রাখার জন্য দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা অপরিহার্য। তবে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রেক্ষিতে ভারতের উদ্বেগ গভীর। বিশেষত, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং ধর্মীয় স্থান ভাঙচুরের ঘটনাগুলি দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং অত্যাচারের ঘটনা উদ্বেগজনক। অভিযোগ উঠেছে যে সংখ্যালঘুদের ওপর ধারাবাহিক হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কট্টরপন্থীদের হাতে মন্দির এবং অন্যান্য ধর্মীয় স্থানগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এমনকি, লুটপাট এবং শারীরিক আক্রমণের ঘটনাও নিয়মিত ঘটছে।

ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসকন পুরোহিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের ঘটনায় ভারত সরকার গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই ঘটনা বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশ্ন তুলছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ এই পরিস্থিতিতে কীভাবে প্রভাবিত হবে, তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে ভারতকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং প্রতিবেশী দেশের সরকারকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে বাধ্য করতে হবে।

সংখ্যালঘুদের উপর ক্রমাগত হামলা এবং ধর্মীয় স্থানের অবমাননা বন্ধ করতে বাংলাদেশ সরকারের কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের নজর এখন বাংলাদেশের দিকে। ভারতের তরফে কূটনৈতিক চাপে কীভাবে এই সমস্যার সমাধান হয়, সেটাই দেখার বিষয়।

তারিখ: ১৭.১২.২০২৪