রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের মুক্তির জন্য চট্টগ্রাম আদালতে আইনি লড়াই চালাবেন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ। নিজের জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তিনি আদালতে সওয়াল করবেন বলে জানিয়েছেন। ২ জানুয়ারি আদালতে তাঁর জামিনের শুনানি রয়েছে। চিন্ময়ের বিরুদ্ধে ওঠা মামলাগুলোতে তাঁর পক্ষে কোনো আইনজীবী সওয়াল করতে চাননি, যা আদালতে উত্তেজনার সৃষ্টি করে। রবীন্দ্র ঘোষ এ ঘটনায় আইনজীবীদের হেনস্থার অভিযোগ তুলেছেন। চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারির পর বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিক্ষোভ দেখা দেয়। ভারতের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
ব্যারাকপুর, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪: জীবনের ঝুঁকি নিয়েও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের পক্ষে চট্টগ্রাম আদালতে সওয়াল করবেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ। সোমবার ব্যারাকপুরে চিকিৎসার জন্য ছেলের কাছে অবস্থানরত রবীন্দ্র ঘোষ সংবাদমাধ্যমকে জানান, তিনি ভয় পান না এবং মানবাধিকারের স্বার্থে সবসময় এগিয়ে আসেন। তিনি বলেন, “আমি পালানোর জন্য ভারতে আসিনি। আগামী ২ জানুয়ারি আদালতে চিন্ময়কৃষ্ণের পক্ষে সওয়াল করতে আমি আবার বাংলাদেশে যাব।”
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে চিন্ময়কৃষ্ণের জামিনের শুনানি রয়েছে। চিন্ময়কৃষ্ণ দাস, যিনি বাংলাদেশের ইসকনের প্রাক্তন সদস্য ও সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র, তাকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। ডিসেম্বর মাসে মামলাটি আদালতে উঠলেও তিনি কোনো আইনজীবীর সহায়তা পাননি, যার ফলে মামলাটি এক মাসের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়।
রবীন্দ্র ঘোষ, যিনি বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের চেয়ারম্যান, আদালতে চিন্ময়কৃষ্ণের জামিনের জন্য এবং মামলার শুনানি এগিয়ে আনার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আদালতে উপস্থিত শতাধিক আইনজীবীর চিৎকার ও বিরোধিতার কারণে শুনানি স্থগিত হয়ে যায়। রবীন্দ্র ঘোষ অভিযোগ করেন যে, আদালত কক্ষে তাঁর বিরুদ্ধে হেনস্থার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয় এবং বিচারক তাঁর আবেদন মঞ্জুর করতে চাইলেও বিরোধিতার মুখে তা স্থগিত থাকে।
চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের পর চট্টগ্রাম এবং রংপুরসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। বিক্ষোভকারীরা চিন্ময়ের মুক্তির দাবি জানিয়ে রাস্তায় নামে। এই অস্থির পরিস্থিতি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কেও প্রভাব ফেলেছে। ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
রবীন্দ্র ঘোষের ছেলে রাহুল ঘোষ জানিয়েছেন, রবীন্দ্র ঘোষ সম্প্রতি একটি দুর্ঘটনায় চোট পান এবং অস্ত্রোপচারের পরে চিকিৎসার প্রয়োজনে ভারতে আসেন। তবে তিনি তাঁর বাবার বাংলাদেশে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ভারতে আসতে রবীন্দ্র ঘোষকে তাঁর পরিচিতজনরা সহায়তা করেছেন।
রবীন্দ্র ঘোষের এই সাহসিকতা এবং চিন্ময়কৃষ্ণের পক্ষে তাঁর আইনি লড়াই বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর আন্তর্জাতিক নজর আকর্ষণ করেছে। চিন্ময়কৃষ্ণের মুক্তি এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার বিষয়টি বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
তারিখ: ১৭.১২.২০২৪