আগরতলায় বাংলাদেশের কনস্যুলার সেবা বন্ধ

আগরতলায় বাংলাদেশের কনস্যুলার সেবা বন্ধ

আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর কনস্যুলার সেবা বন্ধ। নিরাপত্তার কারণে ভিসা প্রদানও স্থগিত। হামলায় জাতীয় পতাকা পোড়ানোর নিন্দা জানিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব। ঘটনায় সাতজন গ্রেপ্তার ও পুলিশের চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪: ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর সেখানে কনস্যুলার সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন নিশ্চিত করেছেন যে নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সহকারী হাইকমিশন থেকে ভিসা সেবা আপাতত বন্ধ থাকবে।

গতকাল সোমবার দুপুরে আগরতলার সহকারী হাইকমিশনে একদল উগ্রপন্থী হামলা চালায়। হামলাকারীরা ভবনের ভাঙচুর, ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড ভেঙে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা খুলে নিয়ে পোড়ানোর মতো নিন্দনীয় কাজ করেছে। এ ঘটনার পর ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মাকে জরুরি ভিত্তিতে তলব করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ সরকার এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ভারতের কাছে কঠোর প্রতিবাদ পাঠিয়েছে।

আগরতলায় হামলার ঘটনায় ভারত তাৎক্ষণিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঘটনায় জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। এর পাশাপাশি, পুলিশের নির্লিপ্ততার কারণে চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই চার কর্মকর্তার মধ্যে তিনজন উপপরিদর্শককে সাময়িক বরখাস্ত এবং এক ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্টকে দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হয়েছে।

হামলার পেছনে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি গ্রেপ্তারকাণ্ডের জের ধরে ক্ষোভের সূত্রপাত হয়। বাংলাদেশের সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করার ঘটনায় উগ্রপন্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই গ্রেপ্তারকে সংখ্যালঘু নির্যাতন হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবাদ শুরু হয়। এমনকি, সুতারকান্দি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টাও চালানো হয়।

আগরতলার সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর ভারতের বিভিন্ন স্থানে থাকা বাংলাদেশের মিশনগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে, আগরতলাসহ ভারতে বাংলাদেশের সব মিশনের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য ইতিমধ্যেই একটি আনুষ্ঠানিক নোট পাঠানো হয়েছে।

ঘটনাটি নিয়ে ত্রিপুরার রাজ্য প্রশাসনও সক্রিয় হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, “শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু এ ধরনের নিন্দনীয় আচরণ সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।” মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে এমন আক্রমণ প্রতিহত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, হামলার পর বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের কনস্যুলার সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অনেকেই এই পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান কামনা করেছেন। ঢাকার সঙ্গে আগরতলার ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে অনেক বাংলাদেশি এখান থেকে ভিসা সেবা নিয়ে থাকেন। তাই সেবার সাময়িক স্থগিতাদেশ দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তারিখ: ০৩.১২.২০২৪