বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে ইস্টবেঙ্গল, ‘শিকড়’ মনে করিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ

বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে ইস্টবেঙ্গল, ‘শিকড়’ মনে করিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ

ইস্টবেঙ্গল ক্লাব বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। ক্লাবের সমর্থকদের পূর্বপুরুষের শিকড় বাংলাদেশে থাকায় তারা উদ্বিগ্ন। লাল-হলুদ ক্লাব কর্তৃপক্ষ সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানিয়েছে।

কলকাতা, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৪: ইস্টবেঙ্গল ক্লাব বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর পরিকল্পিত আক্রমণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এক বিজ্ঞপ্তিতে ক্লাব জানিয়েছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের ঘটনা তাদের সমর্থকদের মানসিকভাবে প্রভাবিত করেছে। বিশেষ করে ক্লাবের অধিকাংশ সমর্থকের পূর্বপুরুষ পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত। দেশভাগের আগে এবং পরবর্তী সময়ে, বিশেষ করে ষাটের দশকের শেষ এবং সত্তরের দশকের শুরুতে বহু সমর্থকের পরিবার এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ক্লাব কর্তৃপক্ষের মতে, বর্তমানে তারা প্রচুর ফোন ও ই-মেইল পাচ্ছেন, যেখানে সমর্থকরা এই ইস্যুতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

লাল-হলুদ ক্লাবের সচিব রূপক সাহার জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইস্টবেঙ্গল ক্লাব সব সময় জাতি এবং ধর্মের নামে হিংসা এবং অত্যাচারের প্রতিবাদে সোচ্চার থেকেছে। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তারা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন এবং মনে করছে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর যে ব্যাপক নিপীড়ন চালানো হচ্ছে, তা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “আমরা সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাই যে তারা যেন এই সমস্যাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সমাধান করেন এবং সীমান্তের ওপারে আমাদের মা, বোন ও ভাইদের বাঁচাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।”

উল্লেখযোগ্য যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই সেখানে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, রাষ্ট্রীয় মদতে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে হিন্দু ঐক্যজোটের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গ্রেপ্তার করেছে। তাঁর গ্রেপ্তারির পর বাংলাদেশজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। চিন্ময় কৃষ্ণের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়েছে এবং সনাতনী সম্প্রদায়ের মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের বিবৃতিতে এই ঘটনার প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ক্লাবের সহস্রাধিক সমর্থকের শিকড় বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত। এমনকি বর্তমানে বহু সমর্থকের আত্মীয়স্বজন ওপার বাংলায় বসবাস করছেন। ক্লাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই নির্যাতনের ঘটনা মেনে নিতে পারছে না এবং তাদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করা অত্যন্ত জরুরি।

এই শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাব বরাবরই সামাজিক এবং মানবিক ইস্যুতে তাদের অবস্থান প্রকাশ করেছে। এবারও তারা বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দাবি জানিয়েছে। ক্লাবের বিবৃতি তাদের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। লাল-হলুদ সমর্থকরা আশা করছেন, তাদের ক্লাবের এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত ঘটাবে।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মন্ত্রকের তরফে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই বিষয়ে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের সিদ্ধান্তেই আমরা সমর্থন জানাব।’’

ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের এই বিবৃতি শুধু তাদের সমর্থকদেরই নয়, বরং আন্তর্জাতিক মহলেও বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর এই নির্যাতন নিয়ে ক্লাবের সোচ্চার অবস্থান মানবতার প্রতি তাদের দায়বদ্ধতারই পরিচায়ক।

তারিখ: ০৩.১২.২০২৪