বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে গুয়াহাটিতে ইসকনের শান্তিপূর্ণ সংকীর্তন

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে গুয়াহাটিতে ইসকনের শান্তিপূর্ণ সংকীর্তন

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদে গুয়াহাটির ইসকন মন্দিরে শান্তিপূর্ণ সংকীর্তনের আয়োজন করা হয়। ইসকনের প্রতিনিধি ও ভক্তরা প্রার্থনার মাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষার দাবি জানান এবং মানবিক মূল্যবোধ রক্ষায় শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান করেন।

গুয়াহাটি, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৪: গুয়াহাটির উত্তরাংশে অবস্থিত ইসকন মন্দিরে রবিবার এক শান্তিপূর্ণ সংকীর্তন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের সনাতনী সম্প্রদায়ের উপর চলমান নির্যাতন ও হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। ইসকন মন্দির কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে যে হামলা হয়েছে, তা শুধু বাংলাদেশের নয়, গোটা মানবতার বিবেককে নাড়া দিয়েছে।

বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র এবং ইসকনের বিশিষ্ট ভক্ত নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী সম্প্রতি ঢাকার পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হন। এই গ্রেফতারি এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে ইসকন বিশ্বব্যাপী সংকীর্তন আয়োজন করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষার আহ্বান জানিয়েছে।

উত্তর গুয়াহাটির ইসকন মন্দিরে আয়োজিত এই সংকীর্তনে বহু ভক্ত এবং শুভানুধ্যায়ী অংশ নেন। তাঁরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে প্রার্থনা করেন এবং বাংলাদেশের অত্যাচারিত সংখ্যালঘুদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। ইসকনের গুয়াহাটির মন্দির সভাপতি শ্রীজনার্ধন দাস বলেন, “আমরা বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর চলমান সহিংসতা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, যাতে তারা চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভু, ইসকনের ভক্তগণ এবং অন্যান্য নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা ভারতের সরকারকেও অনুরোধ জানাই, যাতে তারা প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে কাজ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা নিশ্চিত করে। আজকের সংকীর্তনের মাধ্যমে আমরা ভুক্তভোগীদের প্রতি সমর্থন ও সহমর্মিতা জানিয়েছি এবং বাংলাদেশের শান্তি পুনরুদ্ধারের জন্য প্রার্থনা করেছি। এই প্রার্থনা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া সবার প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।”

স্থানীয় সংকীর্তন আয়োজকরা জানান, বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে মন্দির ও সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ওপর আক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মন্দিরগুলি ধ্বংস করা হচ্ছে এবং অনুসারীরা গুরুতর হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উগ্রবাদী দলগুলি এই হামলাগুলি চালিয়ে অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। বাংলাদেশের হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর এই নির্যাতন চলতে দেওয়া যায় না।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “বিশ্বব্যাপী সংকীর্তন কর্মসূচি মূলত একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, যা গোটা হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যথা ও শোকের প্রতীক। আমরা বাংলাদেশের বা কোনো নির্দিষ্ট ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নই। আমরা শুধু চাই, বাংলাদেশের সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত হোক।”

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর এই ধরনের আক্রমণের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে ইসকনের ভক্ত এবং শুভানুধ্যায়ীরা একত্রিত হয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেন, সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে এই সহিংসতা বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এগিয়ে আসতে হবে। গুয়াহাটির এই সংকীর্তন কর্মসূচি বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে।

তারিখ: ০২.১২.২০২৪