উত্তপ্ত বাংলাদেশের ঢাকায় আক্রান্ত হলেন বেলঘরিয়ার বাসিন্দা সায়ন ঘোষ। বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হামলায় রক্তাক্ত অবস্থায় ভারতে ফিরেছেন তিনি। সংখ্যালঘু নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত। সায়নের অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
কলকাতা, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৪: উত্তর ২৪ পরগনার বেলঘরিয়ার দেশপ্রিয় নগরের বাসিন্দা সায়ন ঘোষ দিন দশেক আগে ঢাকায় বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ২৩ নভেম্বর ঢাকায় পৌঁছান তিনি এবং ২৬ নভেম্বর দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ফেরার আগের দিন ঢাকার বাজারে বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের দ্বারা আক্রান্ত হন। সায়নের অভিযোগ, রাস্তায় হঠাৎ করে এক দল লোক এসে তাঁদের ঘিরে ধরে জেরা করতে শুরু করে। জানতে পারে তিনি ভারত থেকে এসেছেন, তারপরেই তাঁরা চড়াও হয়ে প্রকাশ্য রাস্তায় মারধর শুরু করে। আশপাশের কেউ এগিয়ে এসে সাহায্য করেননি। বন্ধুর তৎপরতায় দুষ্কৃতীরা সরে গেলেও ততক্ষণে সায়ন রক্তাক্ত হয়ে পড়েছিলেন।
এই ঘটনার পর সায়ন স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানাতে যান। কিন্তু সেখানেও তেমন কোনও সাহায্য পাননি। পুলিশ প্রথমেই তাঁকে চিকিৎসা করিয়ে আসতে বলে। আহত অবস্থায় এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে ঘুরতে থাকেন সায়ন ও তাঁর বন্ধু। কেউ চিকিৎসা করতে রাজি হয়নি। শেষ পর্যন্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা হয়। সায়নের অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা তাঁর মোবাইল ফোন ও টাকাপয়সা কেড়ে নেয়। চিকিৎসা শেষে ভয়ে গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে ফেরেন।
দেশে ফিরেই সায়ন বেলঘরিয়া থানায় এবং গেদে সীমান্তের শুল্ক অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সোমবার তিনি কলকাতার বাংলাদেশের উপদূতাবাসে গিয়ে পুরো বিষয়টি জানাবেন বলে জানান। বাড়ি ফিরে এখনও আতঙ্কে আছেন সায়ন। তিনি জানান, বাংলাদেশে থাকা তাঁর বন্ধুর নিরাপত্তা নিয়েও তিনি চিন্তিত।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। একের পর এক সংখ্যালঘু নেতা এবং সন্ন্যাসীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তাঁদের মুক্তির দাবিতে পথে নেমে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন। সায়নের এই অভিজ্ঞতা পরিস্থিতির জটিলতাকে আরও প্রকট করে তুলেছে।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে দিল্লি উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে সংখ্যালঘু-সহ প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বারবার অনুরোধ করা হয়েছে। সায়নের ঘটনায় ভারতীয় প্রশাসন বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিষয়টি তদন্ত করার উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশে চলমান অস্থিরতার কারণে ভারতীয় পর্যটকদের জন্য সতর্কতার বার্তা দেওয়া হতে পারে। সায়নের মতো পরিস্থিতি যাতে আর কারও সঙ্গে না ঘটে, তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সংখ্যালঘু নিরাপত্তার প্রশ্নে বাংলাদেশের প্রশাসনের দায়িত্বশীল ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারিখ: ০২.১২.২০২৪