আমরা সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু শব্দ শুনতে চাই না: জামায়াতের আমির

আমরা সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু শব্দ শুনতে চাই না: জামায়াতের আমির

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বগুড়ার সুধী সমাবেশে তিনি বলেন, সকল ধর্মের মানুষ এখানে সহাবস্থানে বসবাস করবে এবং যার যার ধর্ম পালন করবে। তিনি সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জানান, জামায়াত এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে যেখানে সব ধর্ম ও জাতি নির্বিশেষে শান্তি ও সম্প্রীতির মধ্যে জীবনযাপন করবে। পাশাপাশি, তিনি বর্তমান সরকারের জুলুম-নির্যাতন নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

বগুড়া, ২৬ অক্টোবর ২০২৪: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান দেশের সকল নাগরিককে জাতি, ধর্ম, ও সংখ্যা বিবেচনা না করে একত্রিতভাবে বসবাসের আহ্বান জানিয়েছেন। আজ শনিবার বিকেলে বগুড়ার ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে জামায়াতের বগুড়া জেলা ও শহর শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “আমরা চাই না এই জাতিকে আর কেউ বিভক্ত করুক। আমরা সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু শব্দ শুনতে চাই না। এখানে জন্ম নেওয়া প্রত্যেকেই গর্বিত নাগরিক। সকল ধর্মের মানুষ দলমত-নির্বিশেষে এখানে বসবাস করবে এবং যার যার ধর্ম পালন করবে।” তিনি আরও বলেন, “যদি মসজিদে নামাজ পড়ার সময় পাহারা দিতে না হয়, তাহলে মন্দিরে উপাসনার সময়ও যেন পাহারা দেওয়ার প্রশ্ন না ওঠে।”

শফিকুর রহমান জামায়াতের ভিশন হিসেবে জানান, দলটি এমন একটি বাংলাদেশ দেখতে চায়, যেখানে দুর্নীতিমুক্ত বিচারব্যবস্থা থাকবে এবং মানুষের আদালতে ঘুরতে হবে না। তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামী কোরআনের আলোকে একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চায়।” তরুণদের প্রতি আস্থাশীল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জামায়াত তরুণদের এমন শিক্ষা দিতে চায়, যাতে তারা আল্লাহর ভয় করবে, মানুষকে ভালোবাসবে, এবং নিজের যোগ্যতায় চাকরি পাবে।”

তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “সাড়ে ১৫ বছর ধরে তারা জনগণের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। অসংখ্য পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, অনেককে খুন ও গুম করেছে।” তিনি উল্লেখ করেন যে জামায়াত প্রতিহিংসার রাজনীতি চায় না, কিন্তু এই সরকারের নির্যাতনের বিচার হওয়া উচিত।

সরকার পরিবর্তনের পর জামায়াত কোনো ধরনের দখল বা ভাঙচুরে জড়ায়নি বলে দাবি করে শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে নই। কেউ যদি বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ হাজির করতে পারে, তবে আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চাইব।” এছাড়া, তিনি দাবি করেন যে বিগত সরকারের সময় জামায়াত সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

তিনি শেখ হাসিনার দেশত্যাগের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “ভালো মানুষ কখনো পালায় না। তাদের দেশপ্রেম ও কান্না মেকি, তারাই দেশ থেকে পালিয়ে যান।” সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “তিনি শুধু বিচারক নন, একজন রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত হিসেবেও কাজ করেছেন। পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার হত্যার মধ্য দিয়ে জুলুম শুরু হয়েছিল।”

জামায়াতের আমির আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে মন্তব্য করেন যে, যারা জনগণের ওপর অস্ত্র চালিয়েছে, তাদের আর ভোট চাওয়ার নৈতিক অধিকার নেই। তিনি বলেন, “তারা জনগণের সামনে চলাফেরা করতে পারবে না এবং তাদের বিচার হবে।”

জামায়াতের বগুড়া শহর শাখার আমির আবিদুর রহমানের সভাপতিত্বে এ সুধী সমাবেশে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দীন, এবং শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি গোলাম রব্বানীসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।

তারিখ: ১০.১১.২০২৪