ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনরাবর্তন বাংলাদেশের রাজনীতিতে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ ও আমেরিকার সম্পর্ক নিয়ে কূটনৈতিক মহলে চলছে ব্যাপক চর্চা। দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, যিনি ট্রাম্পের সঙ্গে মধুর সম্পর্কের অভাবে কিছুটা চাপে রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। ইউনূস ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানালেও, অতীতে ট্রাম্প তাঁকে নিয়ে কঠোর মন্তব্য করেছিলেন। এদিকে, সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন মোড়ে নিয়ে যেতে পারে। (সূত্রঃ আনন্দবাজার)
ঢাকা, ৭ নভেম্বর: ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর এর প্রভাব নিয়ে কূটনৈতিক মহলে আলোচনা তুঙ্গে উঠেছে। বাংলাদেশের দীর্ঘতম সীমান্ত ভাগ করে নেওয়া প্রতিবেশী দেশ ভারতের কাছেও এ ঘটনাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেমোক্র্যাট-ঘনিষ্ঠ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর ট্রাম্পের ফিরে আসায় নতুন চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্ক সবসময়েই কণ্টকাকীর্ণ ছিল। ২০১৬ সালে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর, তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন ইউনূস। এমনকি, ট্রাম্পও তাঁকে নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন। সেই সময় ওয়াশিংটনে ইউনূসের দল থেকে একটি প্রতিনিধি গিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে গেলে ট্রাম্প জানতে চান, “ঢাকার সেই মাইক্রোফাইন্যান্সের ব্যক্তি কোথায়? শুনেছি, তিনি আমাকে হারাতে চাঁদা দিয়েছিলেন।” স্পষ্ট ছিল, ট্রাম্প মনে করেছিলেন ইউনূস ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে সমর্থন করেছিলেন।
সম্প্রতি মার্কিন নির্বাচনের ঠিক আগে ট্রাম্প তাঁর সমাজমাধ্যমে একটি মন্তব্য করে বলেন, “বাংলাদেশে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এবং সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হচ্ছে, তাঁদের রক্ষা করার জন্য আমার নেতৃত্বের প্রয়োজন।” এই বক্তব্যের পর কূটনৈতিক মহলে ধারণা করা হচ্ছে, আমেরিকার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সমর্থন অর্জনের জন্যই এমন মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। তবে, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভবিষ্যতের কূটনৈতিক সম্পর্কের দিক নির্দেশ করছে।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকারের রদবদল হয়েছে, এবং এই আন্দোলন নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের সংযোগ সম্পর্কে কূটনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে। এ বছরের সেপ্টেম্বরে ইউনূস আমেরিকা সফরে গিয়ে ডেমোক্র্যাটদের সাথে দেখা করলেও কোনও রিপাবলিকান নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। তাছাড়া, ২০১৬ সালে ট্রাম্পের জয়ের পর ইউনূস প্যারিসের একটি বক্তৃতায় বলেন, ‘এই জয় সূর্য গ্রহণের মতো। কালো দিন আসছে।’
এদিকে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও ট্রাম্পের জয়ের প্রতি অভিনন্দন জানানো হয়েছে। এক বিবৃতিতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা স্মৃতিচারণ করেন যে, অতীতে তাঁর বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছিল ট্রাম্পের সঙ্গে। শেখ হাসিনা আশাবাদী যে, ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।
বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনা, সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের রিপোর্ট এবং ভারতীয় সীমানায় বেআইনি কর্মকাণ্ডের কারণে দেশটির পরিস্থিতি বেশ স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে। ইউনূস ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছেন যে, “বাংলাদেশ ও আমেরিকার পারস্পরিক স্বার্থের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।” তবে, কূটনীতিকদের মতে, এই বিবৃতির মাধ্যমে ইউনূস আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করার চেষ্টা করছেন, তবে ট্রাম্পের সঙ্গে অতীতের সংঘাতময় সম্পর্ককে পুরোপুরি মেরামত করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই গেছে।
আগামী দিনে ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমেরিকা ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক কোন পথে এগোবে, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
তারিখ ০৭.১১.২০২৪