বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকার সুরক্ষায় আন্দোলনরত সনাতন জাগরণ মঞ্চ তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি ১৫ দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছে। সংগঠনটির মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ প্রভু জানান, সাম্প্রতিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু রাজনৈতিক দল এবং প্রশাসনের কিছু ব্যক্তি উদ্দেশ্যমূলকভাবে আন্দোলনকে বিভ্রান্তিকরভাবে উপস্থাপন করছে। সরকারের অনুরোধে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আশ্বাসে সনাতন জাগরণ মঞ্চ সাময়িকভাবে আন্দোলন স্থগিত করেছে।
চট্টগ্রাম, ৮ নভেম্বর ২০২৪: বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় সক্রিয় সনাতন জাগরণ মঞ্চ তাদের চলমান আন্দোলন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি ১৫ দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছে। বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ প্রভু এই স্থগিতের ঘোষণা দেন। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করে চিন্ময় প্রভু বলেন, সাম্প্রতিক সহিংসতামূলক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু রাজনৈতিক দল এবং প্রশাসনের কিছু সদস্য তাদের আন্দোলনকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।
চিন্ময় প্রভু অভিযোগ করেন, চট্টগ্রামের হাজারী লেনের সাম্প্রতিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু প্রতিক্রিয়াশীল চক্র দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এ ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সতর্কতা অবলম্বন করে এবং দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আপাতত আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। চিন্ময় প্রভু আরও বলেন, “সরকার আমাদের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়েছে। এ ছাড়া তারা আমাদের দাবিগুলো বিবেচনার বিষয়ে আন্তরিকতা দেখিয়েছে এবং কিছু সময় চেয়েছে। তাই আমরা এই বিষয়টি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছি।”
এছাড়া, চিন্ময় প্রভু দাবি করেন, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সনাতন জাগরণ মঞ্চের আট দফা দাবি এবং ১৯ জন সদস্যের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। এই সমর্থনকে বিবেচনায় নিয়ে এবং সরকারের অনুরোধকে সম্মান জানিয়ে সনাতন জাগরণ মঞ্চ সাময়িকভাবে তাদের আন্দোলন স্থগিত রেখেছে।
সনাতন জাগরণ মঞ্চের আত্মপ্রকাশ ঘটে গত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর। এই মঞ্চটি হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন এবং মঠ-মন্দিরে হামলার বিচারসহ আট দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি মাঠে মঞ্চটি বড় সমাবেশের আয়োজন করে। তারা দেশের আটটি বিভাগেও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা করে, যেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা এবং অধিকার রক্ষার আহ্বান জানানো হয়।
সনাতন জাগরণ মঞ্চের দাবি ছিল, দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যেকোনো ধরনের নির্যাতন-নিপীড়নের বিচার এবং মঠ-মন্দিরে হামলার ঘটনায় অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। আট দফা দাবি মঞ্চের মধ্যে আরও রয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, এবং তাদের সুরক্ষার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।
মঞ্চের এই আন্দোলন স্থগিত করার সিদ্ধান্তে অনেকেই আশাবাদী, কারণ সরকারের এই বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
তারিখ ০৯.১১.২০২৪