জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংখ্যালঘু অন্তর্ভুক্তি ও বৈষম্য নিয়ে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় সংখ্যালঘু নেতারা বৈষম্য ও বিচারহীনতার বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা অভিযোগ করেন যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এখনও রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের শিকার, এবং বর্তমান সরকারও তাদের দাবির প্রতি যথাযথ মনোযোগ দিচ্ছে না। বক্তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকারের বিষয়ে একটি শক্তিশালী অবস্থানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং বলেন, তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় সংসদে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন প্রয়োজন। সংখ্যালঘু নেতারা দেশের ছাত্র সমাজকে এই বৈষম্য দূরীকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
ঢাকা, ৫ নভেম্বর: গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বারবার বৈষম্য, অবহেলা এবং বিচারহীনতার শিকার হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিভিন্ন সংখ্যালঘু নেতারা। বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে “সংখ্যালঘু অন্তর্ভুক্তি প্রশ্ন: সংকট ও সমাধান” শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তারা এ কথা বলেন। বক্তারা উল্লেখ করেন যে, সরকার বিভিন্ন কমিশন গঠন করলেও তাতে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বক্তাদের দাবি, এমন বৈষম্যমূলক ব্যবস্থায় সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষিত রাখা অসম্ভব। রাষ্ট্র যদি সাম্প্রদায়িক থাকে, তাহলে সংখ্যালঘুদের অধিকার কখনও পূর্ণ হতে পারে না। এজন্য সংবিধান থেকেই বৈষম্য দূর করতে হবে বলে তারা মত প্রকাশ করেন।
আলোচনায় অংশ নেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সভাপতি বিজন কান্তি সরকার, পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক এবং আরও অনেকে। তারা দেশের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি ও সংখ্যালঘুদের অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আহ্বান জানান।
অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, “রাষ্ট্রধর্ম ও ধর্মনিরপেক্ষতা একসাথে চলতে পারে না। বিগত তিনটি নির্বাচনে সরকার সংখ্যালঘুদের প্রতিশ্রুতি দিলেও সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়নি। বর্তমান সরকারের প্রতারণামূলক আচরণের কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় প্রতিনিয়ত অবহেলিত হচ্ছে।”
বিজন কান্তি সরকার বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকারের পর আমাদের ছাত্র সমাজের ওপর বড় প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু গত কয়েক মাসে আমরা সংখ্যালঘুদের প্রতি তেমন কোনো সহযোগিতা দেখিনি। আমরা চাই, বর্তমান ছাত্র সমাজ সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য দূর করতে উদ্যোগী হবে।”
গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক সংখ্যালঘুদের জন্য সংসদে ধর্মভিত্তিক সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের দাবী জানান। তিনি বলেন, “সংখ্যালঘুদের অধিকার আদায়ে ধর্মভিত্তিক প্রতিনিধি থাকা প্রয়োজন। তাহলে সংখ্যালঘুদের প্রকৃত কণ্ঠস্বর সংসদে প্রতিফলিত হবে।”
ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, “আওয়ামী লীগ বরাবরই সংখ্যালঘুদের নিয়ে রাজনৈতিক ব্যবসা করে আসছে। সরকার সংখ্যালঘুদের জন্য একটি বিশেষ কমিশন গঠনের দাবী জানিয়েছেন যাতে সংখ্যালঘুদের সমস্যাগুলি যথাযথভাবে সমাধান করা যায়।”
সুনন্দ প্রিয় ভিক্ষু বলেন, “দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবস্থা দেখে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বোঝা যায়। সংখ্যালঘুরা যদি ভালো থাকে, তাহলে দেশের অবস্থাও ভালো হবে। কিন্তু বর্তমানে সংখ্যালঘুরা ভালো নেই। তাদের সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার প্রয়োজন।”
মার্টিন অধিকারী বলেন, “দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আরও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত। তাদের জন্য পাঠ্যবইয়ে সংখ্যালঘুদের অধিকার অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সংখ্যালঘুদের গুরুত্ব বুঝতে পারে।”
এই আলোচনায় বক্তারা সমস্বরে বলেন যে, দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিচারহীনতার শিকার হচ্ছে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতার শিকার হচ্ছে।
তারিখ ০৫.১১.২০২৪