নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ ডালপট্টি এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্য বিমল চন্দ্র দাস ও মানিক চন্দ্র সাহা ভূমি দখলের অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তারা জানান, ২০১৭ সালে একটি ভূমি ক্রয়ের পর থেকে তাদের উপর নির্যাতন এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। অভিযুক্তরা তাদেরকে মারধর করে এবং তাদের হাতের রগ কেটে দেয়। এরপর তারা নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এসে এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন। প্রশাসনের তরফে অভিযোগের তদন্ত চলছে।
নারায়ণগঞ্জ, ৩ নভেম্বর: নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ ডালপট্টি এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্য বিমল চন্দ্র দাস ও মানিক চন্দ্র সাহা ৩ নভেম্বর সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ভূমি দখলের অভিযোগ করেন। তারা দাবি করেছেন, আওয়ামী সন্ত্রাসী ডিস বাবু, শাহরিয়ার রহমান ও মোখলেছুর রহমান ভুট্টো বাহিনী তাদেরকে হেনস্থা ও নির্যাতন করছে।
বিমল চন্দ্র দাস লিখিত বক্তব্যে বলেন, “হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক হওয়ায় আমরা বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে নির্যাতিত হয়েছিলাম এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীণ সরকারের আমলেও আমরা নির্যাতিত হচ্ছি।” তিনি জানান, নিতাইগঞ্জ এলাকার উজির ভুইয়ার ছেলে শাহরিয়ার রহমানের নির্দেশে মোখলেছুর রহমান ভুট্টো ও ডিস বাবু বাহিনী তাদের রেজিস্ট্রি বায়নাকৃত ডালপট্টি এলাকার সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করছে।
বিমল চন্দ্র দাস ও মানিক চন্দ্র সাহা ২০১৭ সালে মৃত হাফিজ উদ্দিন ভুইয়ার ছেলে আব্দুল কাইয়ুম ভুইয়ার কাছ থেকে জমি ক্রয়ের লক্ষ্যে রেজিস্ট্রি বায়না করেন। কিন্তু আব্দুল কাইয়ুম ভুইয়া মারা যাওয়ার পর শাহরিয়ার রহমানের নির্দেশে সন্ত্রাসীরা তাদের জমিতে প্রবেশে বাধা দেয় এবং মারধর করে।
বিমল বলেন, “আমাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে টর্চার সেলে আটকে রেখে হাতের রগ কেটে ফেলা হয়। তারা আমাকে হত্যা করার হুমকি দেয়। আমার জীবনের নিরাপত্তা নেই।”
তিনি আরও জানান, ঘটনাটির পর তিনি জরুরি সহায়তা নম্বর ৯৯৯ এ ফোন দিলেও কোনো আইনগত সহায়তা পাননি। সদর থানার তৎকালীন ওসির কাছেও কোনো সহযোগিতা পাননি।
চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও, তারা ভয়ে ওই জমি বিক্রি করতে পারেননি। তারা নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এসে প্রেসক্লাব সভাপতির কাছে সাহায্য চান।
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি আরিফ আলম দিপু সাহেব এবং সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন সাহেব তাদেরকে সাহায্য করার আশ্বাস দেন এবং পরে পাওয়ার অব অ্যাটর্নী দলিল করার ব্যবস্থা করেন। ২১ সেপ্টেম্বর জমির মাপ নির্ধারণ করে মালিকানার স্বপক্ষে একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়, যা পরে দখলদাররা সরিয়ে ফেলে।
৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর ডিস বাবু ও মোখলেছুর রহমান ভুট্টো আত্মগোপনে চলে যায়। কিছুদিন পর মোখলেছুর রহমান ভুট্টো বাহিনী আবার প্রকাশ্যে এসে পুরনো সাইনবোর্ড সরিয়ে নতুন সাইনবোর্ড স্থাপন করে এবং নির্মাণ কাজ শুরু করে।
এ ঘটনায় প্রেসক্লাব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আদালতে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।
২৮ অক্টোবর ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর, মোখলেছুর রহমান ভুট্টো বাহিনী সেখানে জড়ো হয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। পরে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে।
বিমল চন্দ্র দাস ও মানিক চন্দ্র সাহা জানান, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের পক্ষ নিয়ে লড়াই করতে গিয়ে বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন। তারা সন্ত্রাসী বাহিনীর অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন এবং ভুঁমিদস্যু চক্র তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।
বিমল দাবি করেন, তিনি আইনগত সহায়তা চেয়ে মোখলেছুর রহমান ভুট্টো ও ডিস বাবু বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবেন এবং প্রশাসনের কাছে সঠিক বিচার চান।
তিনি বলেন, “এতোদিন আওয়ামী লীগের প্রভাবের কারণে সাহস পাইনি। প্রশাসন ও আদালতের কাছে আমি সঠিক বিচার চাই।”
উল্লেখ্য, জমিটির বৈধ মালিক হাফিজ উদ্দিন ভুইয়ার ছেলে কাইয়ুম ভুইয়া, যার মৃত্যুর পর জমিটি তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে নামজারি করা হয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন আব্দুল কাইয়ুম ভুইয়ার ছেলে মোজাম্মেল হোসেন ভুইয়া, মোবাশের হোসেন ভুইয়া, মানিক সাহা প্রমুখ।
তারিখ ০৫.১১.২০২৪