বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠী নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের নেতারা। রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত এক গণ-সমাবেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আট দফা দাবি জানানো হয়। বক্তারা দাবি করেন, বিভিন্ন সহিংসতা ও চাঁদাবাজির ঘটনাগুলোর যথাযথ বিচার না হওয়ায় সংখ্যালঘুরা বর্তমানে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। সমাবেশে ধর্মীয় নেতারা বলেন, সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
ঢাকা, ০৪ অক্টোবর ২০২৪: রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক গণ-সমাবেশে বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের নেতারা দাবি করেছেন, দেশে সংখ্যালঘু ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠী নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে এবং প্রতিনিয়ত তারা বিভিন্ন হুমকি ও সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছে। শুক্রবার বিকেলে এই সমাবেশে বক্তারা দেশের গণতন্ত্র ও সহাবস্থান প্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তী সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দেন।
সমাবেশে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, “দেশ স্বাধীন হওয়ার এত বছর পরও আমরা এখনও আদর্শিক ইতিহাস গড়তে পারিনি। এটা আমাদের জন্য লজ্জার। বর্তমান পরিস্থিতির নিরসন হওয়া জরুরি।” তিনি উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা বেড়ে গেছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস আরও বলেন, “দুর্গাপূজার সময় মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়ে নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করায় বোঝা যায়, এ দেশে সংখ্যালঘুরা কতটা অনিরাপদ।”
সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, সরকারের হিন্দু উপদেষ্টা মন্দির পরিদর্শন বা ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ানোর মতো উদ্যোগ নেননি। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, “আপনি শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন, তবে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদ না থাকলে সেই শান্তি বিপন্ন হবে।” তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সংখ্যালঘুদের জন্য দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
সংখ্যালঘু জোটের আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের জন্য নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় স্থাপন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ, সংস্কৃতি ও পালি শিক্ষা বোর্ড গঠন এবং দুর্গাপূজায় পাঁচ দিনের ছুটি ঘোষণা করা।
সমাবেশে আরেক ধর্মীয় নেতা রবিশ্বানন্দ পুরী মহারাজ বলেন, “আমাদের এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়াতে হয়েছে যেখানে শহীদ হচ্ছি, প্রাণ যাচ্ছে। সনাতনী সমাজের সবাই আজ এই দাবির পক্ষে ঐক্যবদ্ধ।” তিনি বলেন, “আমাদের আট দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
আরেক ধর্মীয় নেতা গোপীনাথ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, “১৯৭১ সালের পর থেকে যে সরকারই এসেছে, প্রত্যেকে সনাতনীদের ওপর নির্যাতন করেছে। কোনো সরকারের আমলেই এই অত্যাচারের বিচার করা হয়নি।” তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আট দফা দাবি পূরণের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
এই গণ-সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ধীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস এবং সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নির্মল বিশ্বাস। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের প্রতিনিধি প্রসেঞ্জিত কুমার হালদার, সনাতনী অধিকার আন্দোলনের প্রতিনিধি সাজেন কৃষ্ণ বল, এবং বাংলাদেশ সচেতন সনাতনী নাগরিকের সুশান্ত অধিকারী।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের সাধারণ সম্পাদক লীলারাজ ব্রহ্মচারী, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি দিপঙ্কর সিকদার, বাংলাদেশ সনাতন পার্টির সভাপতি আশীষ চন্দ্র দাশ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে, এবং বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনের মহাসচিব শ্যামল কান্তি নাগসহ আরও অনেকে।
তারিখ: ১০.১১.২০২৪