ময়মনসিংহের নান্দাইলে সুনীল চন্দ্র বর্মণ নামে এক ব্যবসায়ীকে চাঁদার দাবিতে তৃতীয়বারের মতো চিঠি দিয়ে হুমকি দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তাদের দাবি, আগের চিঠির নির্দেশনা মেনে এক লাখ টাকা না দিলে খারাপ পরিণতি বরণ করতে হবে। এর আগে তাকে দুই দফায় চিঠি দিয়ে চাঁদা চেয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এই ঘটনা জানার পর ব্যবসায়ী ও তার পরিবার আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগিতায় ঘটনার তদন্ত চলছে এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ব্যবসায়ীর নিরাপত্তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ময়মনসিংহ, ০৪ অক্টোবর ২০২৪: ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও উত্তরপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী সুনীল চন্দ্র বর্মণ (৬০) তৃতীয়বারের মতো অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি ও হুমকিসংবলিত চিঠি পেয়েছেন। তিনি জানান, শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠে বাসার দরজা খুলতেই দরজায় ঝুলানো অবস্থায় একটি চিঠি দেখতে পান। চিঠিটি পড়ার পর ভয়ে তিনি কাঁপতে থাকেন এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। পরবর্তীতে তিনি স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করে ঘটনাটি জানিয়েছেন।
সুনীল চন্দ্র বর্মণ নান্দাইল পৌরবাজারে পেঁয়াজ-রসুনসহ নানা জাতের মসলা বিক্রির ব্যবসা করেন। সম্প্রতি তার কাছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা প্রথমবার চাঁদা দাবি করে একটি চিঠি পাঠায়। সেখানে ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছিল। চিঠির নির্দেশনা অনুযায়ী টাকা না দেওয়ায় পরদিন বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় আরও একটি চিঠি পাঠানো হয়। এই চিঠিতে চাঁদার পরিমাণ দ্বিগুণ করে এক লাখ টাকা দাবি করা হয় এবং দ্রুত টাকা না দিলে ভয়ঙ্কর পরিণতির শিকার হওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় চিঠি পাওয়ার পর সুনীল চন্দ্র বর্মণ আরও বেশি ভীত হয়ে পড়েন এবং প্রশাসনের সহায়তা চাইতে বাধ্য হন। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি নান্দাইল মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডির তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের এই হুমকির পিছনে কী উদ্দেশ্য রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া তদন্তে প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ আহমেদ বলেন, “চাঁদাবাজির ঘটনা তদন্তের জন্য আমাদের একটি টিম কাজ করছে। অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা ওই ব্যবসায়ীকে তৃতীয়বারের মতো চিঠি দিয়েছে। এই ঘটনাটি দুঃখজনক এবং তদন্ত চলছে। আমরা ব্যবসায়ীকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করছি।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই ঘটনার পর সুনীল চন্দ্র বর্মণ ও তার পরিবার নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরুণ কৃষ্ণ পাল ও ওসি ফরিদ আহমেদ ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে যান এবং তার সাথে কথা বলেন। ইউএনও অরুণ কৃষ্ণ পাল বলেন, “উপর্যুপরি তিনটি চিঠি পেয়ে সুনীল চন্দ্র বর্মণ ও তার পরিবার ভীত হয়ে পড়েছে। আমরা ঘটনাটি পর্যবেক্ষণে রেখেছি এবং দ্রুত এর সমাধান করতে কাজ করছি।”
চিঠিগুলোর মধ্যে দুর্বৃত্তরা সুনীল চন্দ্র বর্মণকে ‘সুনীলদা’ সম্বোধন করে লিখেছেন। দ্বিতীয় চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “প্রথমবার ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু আপনি সেই টাকা না দিয়ে চিঠিটি বিভিন্ন জায়গায় দেখিয়েছেন। এর ফলে এবার দ্বিগুণ অর্থাৎ এক লাখ টাকা দিতে হবে।” লাল কাপড়ে টাকা মুড়িয়ে শ্মশানঘাটে রেখে আসার নির্দেশও চিঠিতে দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় চিঠিতে বলা হয়েছে, “টাকা দিলে আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে নিরাপদে রাখা হবে, অন্যথায় খারাপ পরিণতি হবে।”
এ ঘটনার পর ব্যবসায়ীর পরিবারও আতঙ্কিত অবস্থায় রয়েছে এবং তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝেও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ এই ধরনের অপরাধমূলক কাজের সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি দাবি করেছেন।
তারিখ: ১০.১১.২০২৪