কিশোরগঞ্জ সদরের ব্রাক্ষণকচুরী গ্রামে হিন্দু পরিবারের ওপর হামলা, লুটপাট এবং হুমকির ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি ও বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ইদ্রিস মিয়াকে (৪০) র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। গত ৫ আগস্ট ইদ্রিস মিয়ার নেতৃত্বে এ হামলার ঘটনা ঘটে। গীতা রানী বর্মণ, যার বাড়িতে এ হামলা ও লুটপাট হয়, সেই ঘটনায় মামলা করেন। এই ঘটনার জন্য ভুক্তভোগীরা বাড়িছাড়া হয়ে ছিলেন এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। অবশেষে তিন মাস পর প্রধান আসামি গ্রেপ্তার হওয়ায় পরিবার কিছুটা স্বস্তি অনুভব করছে। তবে মামলার বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
কিশোরগঞ্জ, ১২ নভেম্বর ২০২৪: কিশোরগঞ্জ সদরের ব্রাক্ষণকচুরী গ্রামে হিন্দু পরিবারের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় মূল আসামি বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ইদ্রিস মিয়াকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে কিশোরগঞ্জ র্যাব-১৪-এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. আব্দুল হাই চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন। র্যাব-২ আগারগাঁওয়ের সহযোগিতায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অভিযান চালিয়ে ইদ্রিস মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার এজাহার এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বিকেলে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার রশিদাবাদ ইউনিয়নের ব্রাক্ষণকচুরী গ্রামে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস মিয়ার নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রয়াত জয়কৃষ্ণ বর্মণের স্ত্রী গীতা রানী বর্মণের (৬৫) বাড়িতে হামলা চালায়। তারা ঘরে ঢুকে আসবাবপত্র, টাকা-পয়সা এবং স্বর্ণালংকার লুট করে। এই আক্রমণের কারণে গীতা রানীর পরিবার বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। এরপর থেকেই পরিবারটি বিএনপি নেতাকর্মীদের হুমকির ভয়ে বাড়িছাড়া ছিল।
মামলার বাদী গীতা রানী বর্মণ ২৩ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় ইদ্রিস মিয়া ও আরও ১০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এই মামলার পরেও আসামিদের গ্রেপ্তার না হওয়ায় ভুক্তভোগী পরিবারটি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগী পরিবার বাড়িতে ফিরে যেতে পারেনি, এবং তারা বিভিন্ন সময় হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।
গীতা রানীর ভাই প্রদীপ বর্মণ বলেন, “প্রায় তিন মাস পেরিয়ে গেলেও মামলার কোনো আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমরা হতাশ ছিলাম। আমাদের পরিবার বিভিন্ন সময়ে হুমকি-ধমকির শিকার হয়েছে, এমনকি আসামিরা মামলা তুলে নিতে ভয় দেখিয়েছে। এ কারণে আমরা আমাদের বাড়িতে ফিরে আসতে পারছিলাম না এবং দুর্গাপূজা ও কালীপূজার মতো ধর্মীয় উৎসবগুলোও উদযাপন করতে পারিনি।”
বিএনপির জেলা সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম জানান, সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর হামলার ঘটনায় ইদ্রিস মিয়ার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ র্যাব-১৪-এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. আব্দুল হাই চৌধুরী জানান, গ্রেপ্তার হওয়া ইদ্রিস মিয়াকে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার জন্য সদর মডেল থানায় হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে। কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “মামলার বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
ভুক্তভোগী পরিবারটি তিন মাস ধরে ভয় ও হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিল। তারা ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের জন্য নানা কর্মসূচি পালন করেছে, যার মধ্যে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলও অন্তর্ভুক্ত। গত বুধবারও তারা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
তারিখ: ১৩.১১.২০২৪