বাংলাদেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভয় ও শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচ (বিডিএমডব্লিউ) এবং হিউম্যান রাইটস অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ (এইচআরএবি)। দুই সংগঠনই সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানায়। শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় নেতৃবৃন্দ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অবিলম্বে পরিস্থিতি শান্ত করতে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান।
ঢাকা, ৭ নভেম্বর ২০২৪: সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার কারণে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয়, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচ (বিডিএমডব্লিউ) এবং হিউম্যান রাইটস অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ (এইচআরএবি)। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত “৩৬ জুলাই–২০২৪ বিপ্লবের সুফল সবার জন্য এবং সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার সুরক্ষায় দরকার রাজনৈতিক সমঝোতা” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন দুই সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
মাইনরিটি ওয়াচের সভাপতি রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর থেকে সহিংস ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সংখ্যালঘুদের মধ্যে শঙ্কা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে সনাতন জাগরণ মঞ্চের সমাবেশ এবং ফেসবুকে ইসকনবিরোধী পোস্টের পর চট্টগ্রামের হাজারী লেনে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ উদ্বেগ আরও বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতি অবিলম্বে নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
মাইনরিটি ওয়াচের মহাসচিব মানিক চন্দ্র সরকার বলেন, রাজনৈতিক কারণে যদি কোনো সংখ্যালঘু ব্যক্তি হামলার শিকার হন, তবে সেটি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। অপরাধের বিচার হতে হবে আইনানুগ প্রক্রিয়ায়; সহিংসতা বা বাড়িঘর পোড়ানোর মতো ঘটনা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। সংখ্যালঘু নির্যাতনে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে হিউম্যান রাইটস অ্যালায়েন্স বাংলাদেশের আহ্বায়ক মাহবুল হক বলেন, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার বিষয়টি গভীর স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে। তিনি অভিযোগ করেন যে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধের প্রতিশ্রুতি সবাই দিলেও বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তাই অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান মাহবুল হক।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান (ইরান), এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আরিফুল ইসলাম। উপস্থিত নেতৃবৃন্দও সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য রাষ্ট্রের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
সভায় বক্তারা আরও বলেন, সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা ও তাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, বরং এটি দেশের সব মানুষের নৈতিক দায়িত্ব।
তারিখ ০৯.১১.২০২৪